দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করছে। তাদের ধারণা, হয়তো তারা কাছাকাছি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। এমন শঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস খোলার আন্দোলন করছেন। এমনটি মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষার্থীদের ওই শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক কোনো পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সমন্বয় করে বিসিএস পরীক্ষা পেছাবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অনুরোধ করা হবে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক কোনো পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সমন্বয় করে বিসিএস পরীক্ষা পেছাবে

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, বিসিএসের আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি করা হবে। এছাড়া করোনার কারণে বিসিএসের জন্য আবেদনের বয়সসীমা অতিক্রান্ত হয়ে কোনো শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা চান দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে তাদের হলে ওঠার ব্যবস্থা করতে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দিতে আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ১ মার্চ হলে উঠতে চান তারা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় টিএসসি মোড়ে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

সব শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন নিয়ে উঠতে হবে হলে

অনলাইন ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, করোনা মোকাবিলায় অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। সংক্রমণের হার কমে আসছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় সাফল্য দেখিয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে করোনার নতুন ধরন পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে।

হলে ওঠার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো- আবাসিক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী যদি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মেডিকেল সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। তবে সাধারণ সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে হলের অবকাঠামো সংস্কার করবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

মন্ত্রী বলেন, হলে ওঠার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো- আবাসিক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী যদি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মেডিকেল সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। তবে সাধারণ সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।

হলে ওঠার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী এমন তথ্য জানান। করোনাকালীন উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অনলাইনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু তাদের আবাসিক হল নেই তাই তাদের ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে সেখানে অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। কারণ একজন শিক্ষার্থী যদি আক্রান্ত হন তবে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কারও যদি ভ্যাকসিন নিতে মেডিকেল সমস্যা থাকে, তবে তিনি ভ্যাকসিন ছাড়াও হলে উঠতে পারবেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের ২১০টি আবাসিক হলে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের সবাইকে করোনার টিকা দেওয়া হবে।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার পরিবেশ হয়েছে কি-না, তা পর্যালোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এনিয়ে সভা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ৫-৬ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ফটকের তালা ভেঙে আবাসিক হলে প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রাবি) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সবশেষ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা জোর করে হলে ঢুকে পড়েন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হল ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া না দিয়ে হলে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, হল খোলার জন্য নির্দেশ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা এ আল্টিমেটাম দেন।

তারা বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদের মিনারের বেদিতে দলবেঁধে ফুল দিয়েছে। এখন আর করোনার ভয় নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্ত না দিলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

এনএম/এমএআর