‘করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোনো শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য বিসিএস পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হবে’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এমন ঘোষণার পর অনেকে মনে করেন, ৪১ ও ৪২তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানো হবে।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, এ দুটি পরীক্ষার তারিখ ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েছে। তাই এ দুটি নয়, তারিখ পেছাবে ৪৩তম বিসিএসের।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন, যেসব বিসিএসের আবেদন এখনও নেওয়া হচ্ছে সেগুলো পেছানোর বিষয়ে। কিন্তু ৪১ ও ৪২তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ এবং আসন বিন্যাস ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এ দুটি বিসিএসের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’

অন্যদিকে, বিসিএসের দায়িত্বে থাকা পিএসসি বলছে, পিএসসির পূর্ণ কমিশনের বৈঠক ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি কমিশনের চেয়ারম্যানেরও এই এখতিয়ার নেই।

জানতে চাইলে পিএসসির সদস্য প্রফেসর হামিদুল হক বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়ার পর পিএসসির পূর্ণ কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে কারও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তবে যেসব বিসিএসের আবেদন নেওয়া শেষ সেগুলোর নতুন করে আবেদন নেওয়া সম্ভব না।’

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিসিএসের আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি করা হবে।’

এছাড়া করোনার কারণে বিসিএসের জন্য আবেদনের বয়সসীমা অতিক্রান্ত হয়ে কোনো শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও উল্লেখ করেন দীপু মনি।

৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের ১৯ মার্চে। ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ৪২তম বিসিএসের প্রিলিমিনারী পরীক্ষা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের সব পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে অনুমতি নেওয়ার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।

তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে পরীক্ষা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। ভর্তি কার্যক্রমের ব্যাপারেও আমরা কিছু ভাবিনি। খুব দ্রুতই ভর্তি কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা ভাবছি না। ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম আরও সময়সাপেক্ষ।

২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ২৪ মে (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব আবাসিক হল খুলবে।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার আগে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব শ্রেণিকক্ষ খোলার আগে যথারীতি অনলাইনে ক্লাস চলবে। আবাসিক হলগুলো খোলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। সংক্রমণের হার কমে আসছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় সাফল্য দেখছি।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে করোনার নতুন ধরণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে।

এনএম/এফআর