অবশেষে ১৭ শর্তে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস চালুর অনুমোদন দেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ‘মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদনের চিঠি দিয়েছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের অনুমোদন দেওয়া হলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও নৈরাজ্য আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্টাডি সেন্টার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিধিমালা, ২০১৪ এ বর্ণিত সকল বিধি-বিধান ও শর্ত মেনে চলবে।

·  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের বিরোধিতার পরও এ অনুমোদন

·  উচ্চ শিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা

এতে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ২৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা ও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হয় এমন পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজস্ব অথবা ভাড়া ভবনে কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা থাকতে হবে। পাঠদানের জন্য খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি ফি, টিউশন ফি, ক্রেডিটের সংখ্যা, সেমিস্টারের অ্যাক্টিভিটি ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ ধার্য করা অর্থের মধ্যে উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুপাতিক অংশ হারে স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হতে হবে।

কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তিন সদস্যের সমন্বে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকতে হবে। পাঠ্য তালিকায় কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে প্রতি পাঁচ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি কম্পিউটার ও প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনের শর্ত যথাযথ প্রতিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হলেন এসটিএস গ্রুপের অ্যাডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড। 

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪’ প্রণয়ন করা হয়েছিল ছয় বছর আগে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা ব্যবসায়ীরা ইউজিসির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে যুক্তরাজ্য ও অস্টেলিয়াতে ঘুরিয়ে আনেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দিতে ব্যাপক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। বারবার অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানে ইউজিসিকে সতর্ক করে ২০১৬ সালে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছিল। এমনকি স্টাডি সেন্টারের বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয় শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের আবেদনকারীদের ইচ্ছে মতো।

অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালাটি সে বছরই স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আবার এই বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খসড়াটি জমা দিয়েছে ইউজিসি। কিন্তু বিধিমালা সংশোধনের আগেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরো বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরাও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা অনুমোদনের বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের যুক্তি অনুযায়ী এতো বছর নানা চাপ থাকলেও অনুমোদন  দেয়নি মন্ত্রণালয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলেন।

এনএম/ওএফ