কোনো অভিভাবকরের হাতে তসবীহ, কেউবা হাত তুলে করছেন দোয়া, কেউ কেউ মানসিক চাপ কমাতে করছেন পায়চারি। হাজার হাজার পরীক্ষার্থী ভেতরে পরীক্ষায় বসেছে, আর বাবা-মা বা অভিভাবকরা উৎকণ্ঠা নিয়ে এভাবেই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষায় রয়েছেন। ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় বসেছে তাই তো অভিভাবকদের এমন অপেক্ষা। রাজধানীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে চিত্র এমনই।

সময় তখন বেলা ১১টা, ততক্ষণে এসএসসি পরীক্ষা নামক যুদ্ধে বসেছে পরীক্ষার্থীরা। বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে আজ। চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত।

এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসে ৩ ঘণ্টার পরিবর্তে ২ ঘণ্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে এমসিকিউ ২০ মিনিট, লিখিত ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। এবার সকাল ১০টার পরিবর্তে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বেলা ১১টায়। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশের ২৯ হাজার ৫১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: এসএসসিতে বসেছে ২০ লাখ শিক্ষার্থী

রাজধানীর বাড্ডা হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে লাইফ কেয়ার স্কুলসহ আরও চারটি স্কুলের। সেই পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে তসবীহ হাতে অপেক্ষা করছিলেন নুসরাত জাহান নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মা রওশন আরা। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষায় প্রথম বসেছে আমার মেয়ে। তাই কিছুটা টেনশন হচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত টেনশন থাকবেই। টেনশন কমাতে এবং মেয়ের পরীক্ষা যেন ভালো হয় সেজন্য দোয়া পড়ছি। যাদের সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছে তারাই বুঝে এ টেনশন কেমন।

বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলামের সন্তানও এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের ভেতরে সন্তানকে ঢুকিয়ে দিয়ে তিনিও বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ আমার সন্তানের পরীক্ষা তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তার কেন্দ্রে এসেছি। আমি ও তার মা দুজনই চিন্তায় সময় পার করছি। 

রুমা আক্তার নামের আরেক পরীক্ষার্থীর মা শরিফা খাতুন বলেন, গত দুই-তিন দিনের অতিরিক্ত যানজটের কারণে আজ প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হয়েছি। তবে আজ আশঙ্কাজনক যানজট ছিল না। এরপর যখন আমার মেয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করল তারপর থেকে টেনশন বেড়ে গেছে। তাই তসবীহ পড়ছি ও দোয়া পড়ছি।

এবারের পরীক্ষার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়াতে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিবের মোবাইলে পরীক্ষার সেট কোড পৌঁছে যাবে। তিনি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না, তবে ফিচার ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন। তিনি ছাড়া আর কেউ পরীক্ষার কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না।

অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হবে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।

এএসএস/এসএসএইচ