করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসের আলোকে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের পরীক্ষায় সময় কমিয়ে ২ ঘণ্টা করা হয়েছে।

প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনার কারণে পেছানো হয় পরীক্ষা। এরপর ১৯ জুন পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা আবারও পিছিয়ে যায়। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন: ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষা

পরীক্ষার্থীরা বলছে, বারবার পরীক্ষা পেছানোয় তাদের মনোযোগে ঘাটতি ছিল। অভিভাবকদেরও একই মত। তারা  বলছেন, করোনার কারণে প্রথমে পরীক্ষা পেছালো। এরপর জুন মাসে পরীক্ষা শুরুর মাত্র দুদিন আগে বন্যার কারণে আবারও পরীক্ষা পেছানো হলো। এজন্য তাদের ছেলেমেয়ে মনোযোগ হারিয়েছে। পরীক্ষা পেছানোয় পরীক্ষার্থী সন্তানের পেছনে বাড়তি টাকাও খরচ হয়েছে বলে জানান অনেকে।

রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, বারবার পরীক্ষা পেছানোয় মনোযোগে ঘাটতি হয়েছে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, অনেক বন্ধু জানিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। একবার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সেটা স্টপ রেখে আবার প্রস্তুতি নেওয়া আসলেই মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে কঠিন ব্যাপার। 

আরও পড়ুন: এসএসসিতে বসেছে ২০ লাখ শিক্ষার্থী

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের পরীক্ষার্থী নাহিদ হোসাইন বলেন, করোনার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা পেছালো, এরপর ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হলো। সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু মাত্র দুইদিন বগে জানানো হলো, পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা শক ছিল।

তিনি বলেন, স্থগিত পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে হবে জানানো হলেও অনেকেই ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারেন নি। তারা পড়ায় মনোযোগী হতে পারছিলেন না। আবার অনেকে ভেবেছেন, পরীক্ষা আবারও পেছানো হবে বা অটোপাস দেওয়া হবে। সে কারণে তারা পড়ায় মনোযোগী ছিলেন না। এসব বিষয় পরীক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী মার্জিয়া মুমুর বাবা মামুনুর রশীদ বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই ডিভাইস আসক্তিতে ছিল। তার ওপর বারবার পরীক্ষা পেছানোয় তারাসহ আমরাও হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের মনোজগতে প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে তাদের অনেক বুঝিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী করার চেষ্টা করতে হয়েছে অভিভাবকদের। 

তিনি বলেন, জুনে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় নতুন করে কোচিং, টিউশনের ফি দিতে হয়েছে। তিন মাসে এ খাতে আমার প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ঠিক সময়ে পরীক্ষা হলে তো এই টাকা খরচ করতে হতো না। 

ঢাকা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী মেহেদী হাসানের মা ফারজানা আক্তার বলেন, পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় আমার ছেলে পড়াশোনা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছে বললেই চলে। এই সময়ে শাসন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে, তাই অনেক বুঝিয়েছি। ওকে বোঝানোর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। ওর প্রস্তুতি ভালো ছিল, কিন্তু পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় নতুন করে প্রস্তুতি ভালো হয়নি। এখন খুব টেনশন কাজ করছে। আল্লাহর কাছে বারবার ওর পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ার জন্য দোয়া করছি।

এএজে/এমএ