নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সই জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিন মাস আগে তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এরশাদ আলীর লিখিত অভিযোগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. শামসুদ্দিন ইলিয়াসের পাঠানো পত্রের অনুমোদন সাপেক্ষে বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। 

ওই বছরের ৩১ আগস্ট বোর্ড গার্হস্থ্য অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের জন্য তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে ফারহানা আফরোজ, মনোবিজ্ঞানে মো. শহিদুজ্জামান ও অর্থনীতি বিভাগে এরশাদ আলী নিয়োগ পান।

২০১৯ সালের শুরুতে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে ম্যানেজিং কমিটির হাত থেকে সব নিয়োগ ক্ষমতা চলে যায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) হাতে। এতে বিচলিত হয়ে পড়েন কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন। কেননা এনটিআরসিএর ক্ষমতা নেওয়ার আগেই আরও পাঁচজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

এরইমধ্যে গভর্নিং বডির কাউকে না জানিয়ে মাউশি মহাপরিচালকের প্রতিনিধি স. ম. আব্দুস সামাদ আজাদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সারওয়ার জাহানের স্বাক্ষর জাল করেন অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন। এর মাধ্যমে দর্শনে কামাল হোসেন, বাংলায় মানিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাকির হোসেন, ইংরেজিতে রাজীব ও ভূগোলে আবু রায়হানসহ পাঁচজন এবং আগের তিনজনসহ মোট আটজনকে নিয়োগ দেখান। কলেজ অধ্যক্ষ আমজাদ পাঁচজনের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করার জন্য প্রভাষক এরশাদ আলীর বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সব চিঠিপত্র ও রেজুলেশন টেম্পারিং করেন।

নিয়োগ বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির চিঠি, ডিজি প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি, সাক্ষাৎকার বোর্ডের ফলের শিট ও রেজুলেশনসহ নিয়োগ সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজ নকল করে পাঁচটি বিষয়সহ মোট আটটি বিষয়ে নিয়োগ উল্লেখ করে বেতনের আবেদনপত্র প্রস্তুত করেন কলেজ অধ্যক্ষ আমজাদ।
২০১৫ সালের ২২ আগস্ট তারিখের মূল রেজুলেশন কাটাকাটি ও ঘষামাজা দেখে সন্দেহ হলে এরশাদ আলী ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক কামাল হোসেনের বেতন আবেদন বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস। 

শিক্ষা অফিস থেকে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হলে তিনি দীর্ঘদিন কোনো জবাব দেননি। এক পর্যায়ে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক গত বছরের ২৭ অক্টোবর কলেজে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে অধ্যক্ষের সব জালিয়াতির প্রমাণ পান।

বিষয়টি নিয়ে ওই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এরশাদ আলী দুর্নীতি দমন কমিশন ও মাউশিতে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে (চলতি বছরের ৩ ও ৪ মার্চ) পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস। এরপরই বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে মাউশি।

গত ২০ মে মাউশির সহকারী পরিচালক মো. আবদুল কাদেরের সই করা চিঠিতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাজমুল হাসান ও একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনকে। চিঠিতে তাদের ১৪ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তদন্তে তারা অভিযোগের সত্যতা পান। জুন মাসের শেষের দিকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয় মাউশিতে।

এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ধীরগতি কেন হচ্ছে- জানতে চাইলে মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখার উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আইনি ঝামেলায় জড়াতে চাই না। সে কারণে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি, খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।  

এএজে/আরএইচ