আগের নিয়মে নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার তালিকায় অপেক্ষমান প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে প্রার্থীরা জানান, সম্প্রতি কর্ম কমিশন বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার সুপারিশের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। এখন থেকে নন-ক্যাডার সুপারিশ করা হবে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী। অর্থাৎ কোনো বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সরাসরি বিসিএস থেকে নিয়োগযোগ্য শূন্যপদ সংরক্ষণের মাধ্যমে সংখ্যা উল্লেখ করে আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিএসসিতে পাঠানো হবে। পিএসসি ওই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে সেই নন-ক্যাডার পদগুলো উল্লেখ করে পরে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করবে। এর ফলে বর্তমানে নন-ক্যাডারদের জন্য চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শরীফুল ইসলাম বলেন, পিএসসি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগের জন্য যদি বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী বিভাজন করে, তাহলে উত্তীর্ণ ৮ হাজার ১৬৬ জন মেধাবী চাকরিপ্রার্থীর অধিকাংশ প্রার্থী সুপারিশ বঞ্চিত হবেন। কারণ ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ওই তারিখ পর্যন্ত যত শূন্যপদ ছিল, তার প্রায় সব পদেই ৩৭তম বিসিএস ও ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ২৯ মার্চ ৩৮তম বিসিএসের প্রার্থীদের ৩৩৭টি পদে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন সেই হিসাবে উক্ত তারিখ পর্যন্ত শূন্যপদে সুপারিশ করতে চাইলে আমাদের জন্য পদ নেই বললেই চলে।

আরেক প্রার্থী নুরুন নাহার বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪০তম বিসিএসের প্রার্থীরা। কয়েক দফায় ভাইভা স্থগিত এবং ৪০তম বিসিএসের মাঝে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান ছিল। এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিসিএস। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চার বছর পেরিয়ে পাঁচ বছরে পোড়ায় আমাদের অধিকাংশ প্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়স শেষ। তাছাড়া বর্তমানে বয়সে ৩৯ মাস ছাড় দেওয়া হলেও তা বিসিএসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে। তাই, নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে তারিখভিত্তিক বিভাজন করলে আমরা সুপারিশ বঞ্চিত হব।

মাছুম বিল্লাহ নামে আরেক প্রার্থী বলেন, ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ৩০ মার্চ। প্রায় তিন মাস পর পিএসসি ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের জন্য অনলাইন আবেদনপত্র আহ্বান করে। পিএসসি জুন মাসের ২৬ তারিখ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করার লক্ষ্যে শূন্য পদের অধিযাচন রিকুইজিশন চেয়ে পত্র ইস্যু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০তম বিসিএস ফরমেটে পিএসসিতে নন-ক্যাডার শূন্যপদের অধিযাচন পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে হঠাৎ করে গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির তারিখভিত্তিক ৪০তম বিসিএসের জন্য আসা সব নন-ক্যাডার শূন্যপদ বিভাজন করে সেই অনুযায়ী পদগুলো কমিশনে পাঠানোর জন্য পিএসসি চিঠি পাঠায়। এতদিন ধরে আমরা সুপারিশের অপেক্ষায় আছি। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ছয় মাস পর এ রকম সিদ্ধান্ত নিলে চার বছর ধরে অপেক্ষা করে ১৫শ নম্বরের দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পেয়ে আমরা এবং আমাদের পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ব।

নন-ক্যাডার প্রার্থীদের দাবিসমূহ 

১. কমিশন কর্তৃক ৪০তম বিসিএস বিজ্ঞপ্তির তারিখভিত্তিক সুপারিশের এই বেকারবিরুদ্ধ এবং একইসঙ্গে সরকারের নীতিবিরুদ্ধ অযাচিত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

২. ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের অনুকূলে পিএসসি কর্তৃক প্রদত্ত অধিযাচন পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্ত পদসমূহ ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে সুপারিশ করতে হবে।

৩. পূর্বতন বিসিএসগুলো (৩৫তম, ৩৬তম, ৩৭তম, ৩৮তম) থেকে নন-ক্যাডারে সুপারিশকরণের অনুসৃত প্রক্রিয়া ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করতে হবে।

৪. ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশকরণ প্রক্রিয়া পরবর্তী বিসিএসের (৪১তম বিসিএস) চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগের তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত রেখে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে সুপারিশ করতে হবে।

এএজে/আরএইচ