চলতি বছরের সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে তথ্য নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন তারা। বিবৃতিতে তারা কপি করার ঘটনায় নিজেদের দায় আছে বলে স্বীকার করেছেন। বইটির আরও কোনো ঘাটতি বা ভুলভ্রান্তি কারো নজরে পড়লে সেটি জানাতে অনুরোধ করেছেন তারা। পরবর্তী সংস্করণে বিষয়গুলো ঠিক করা হবে বলে ‍বিবৃতিতে জানানো হয়।

বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে

সারা দেশে ২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক ছাপা হয়েছে। পরবর্তীতে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি একটি দৈনিকে মতামত কলামে সপ্তম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান- অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটির ব্যাপারে একটি অভিযোগ নজরে আসে।

একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল হিসেবে বইটি প্রকাশিত হয়। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে সব লেখকের কাছ থেকেই এক ধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশার ও মন খারাপের কারণ হয়। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।

এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী পাঠ্য বইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।

ঘটনা অসতর্কতায়

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ তারিক আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঠ্যপুস্তক মূলত একটি সংকলন। এখানে অনেক লেখকের লেখা যুক্ত করা হয়ে থাকে। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে একটি অধ্যায়ের দুটি অনুচ্ছেদ ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফি থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে রেফারেন্সটা (সূত্র) লেখা হয়নি। অসতর্কতার ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এর দায় স্বীকার করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, পাঠ্যবই আসলে মৌলিক প্রবন্ধ বা পাবলিকেশন নয়, এটি একটি সংকলন। এখানে নানা ধরনের লেখা থাকতে পারে, অন্য লেখকের লেখা আসতে পারে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য আসতে পারে। সারা পৃথিবীতে এমনভাবে পাঠ্যবই তৈরি করা হয়ে থাকে। বইয়ের মধ্যে লেখাটি কেউ নিজের বলে দাবি করেননি। তাই এখানে চৌর্যবৃত্তি বলা যাবে না। এখানে সোর্স (উৎস) উল্লেখ না করাটা ভুল ছিল। 

উল্লেখ্য, বইটি রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব ও রনি বসাক। আর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

এমএম/কেএ