ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, গভর্নিং বডির অপসারণ না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করা হবে। কলেজটির গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে এমন আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে রোববার (৫ জানুয়ারি) গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অন্যান্য সদস্যদের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষকরা। একই সাথে গভর্নিং বডির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। 

কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম, জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা, ইংরেজি বিভাগের সেগুপ্তা ইসলাম, সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজসহ প্রায় ৭০ জন শিক্ষক এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছেন।

আন্দোলনে একত্বতা প্রকাশ করে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, কলেজের দুর্নীতিবাজ কতিপয় শিক্ষক ও গভর্নিং বডি কলেজটির সুনাম ধ্বংসের পায়তারা করছে। আমাদের থেকে পোশাক বাবদ চার হাজার টাকা নেওয়া হলেও দেওয়া হয় নিম্নমানের পোশাক। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হলেই গুনতে হয় এক হাজার টাকা আবার চার বিষয় ফেল করলে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা এমন নিয়ম বন্ধ চাই। শিক্ষার্থীবান্ধব কলেজ হোক। কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডি অপসারণ করা হোক। 

এ বিষয়ে সিএসই বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজ বলেন, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের এ কর্মসূচি চলতে থাকবে। সমস্যা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সহযোগিতা পাব বলে আমাদের বিশ্বাস। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের দ্রুত শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এমনটা প্রত্যাশা করছি।

ক্লাস বর্জনে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির সমস্যা হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমস্যা তো কিছু থাকবেই। আমরা শিক্ষক আমরা তো অভিভাবকও। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক। আমরাও চাই দ্রুত ক্লাসে ফিরতে, তবে তা সমাধানের মধ্য দিয়ে। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে এমন কর্মসূচি আসতো না। 

গভর্নিং বডির অপসারণের দাবিতে শিক্ষকরা জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত গভর্নিং বডির সভাপতি ও তাদের দোসররা পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ কলেজে কোনো ক্লাস বা কোনো ধরনের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। একইসাথে অনিয়মের হোতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। 

তারা বলেন, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। গভর্নিং বডিতে অন্য সব পদে কিছুটা পরিবর্তন এলেও সভাপতির পদটিতে এত বছরেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। 

সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করছে উল্লেখ করে তারা বলেন, কিছুদিন আগে বিভিন্ন অনিয়ম করে ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ করে সাবেক অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন তারা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় এগুলো কখনোই প্রকাশিত হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। 

তারা আরও বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তের পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তদন্ত কাজের জন্য কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে। তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করতে অভিযুক্তরা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেখানে অন্য আরও ছয়জনের পাশাপাশি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে প্রতিপক্ষ করা হয়। কিন্তু অজানা কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জোর দাবি জানান শিক্ষকেরা।

এমএম/ওএফ