প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। সফটওয়্যারের টেকনিক্যাল কোডিংয়ে ভুল হওয়ায় সার্বিক ফলাফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ফলাফলটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে পাঠানো সব ফলাফল স্থগিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৃত্তি ফলাফল প্রকাশের পরপর ডিপিই থেকে তা স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটা কমিটি বৈঠক করছেন। খুব শিগগিরই একটি সমাধান হয়ে যাবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট অনুজ কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ফলাফলটি স্থগিত হয়েছে। দ্রুত সময়ে সমাধান করার জন্য আমরা বৈঠকে বসেছি। 

ডিপিই’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তর কুমার দাশ বলেন, ফল প্রকাশের পর সফটওয়্যারের কিছু কোডিংয়ে সমস্যা দেখা যায়। এরপর ফল স্থগিত রাখা হয়। সে কারণে প্রকাশিত ফলাফল অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।  ইতোমধ্যে সংশোধন কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল বুধবার তা আবারো প্রকাশ করা হবে। এছাড়া ফল বিদ্যালয়ে না পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশোধন কাজ শেষ করা হলে নতুন করে ফলাফল আবারো পাঠানো হবে। আর সেটি বিদ্যালয়ে পাঠাতে বলা হবে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বৃত্তির ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ জনকে ২০২২ সালের বৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়। এদের মধ্যে ট্যালেন্টপুল কোটায় ছিল ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী আর সাধারণ কোটায় ছিল ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রাথমকি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসারে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান এ চারটি বিষয়ে হয় পরীক্ষা। এবারের বৃত্তি পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ৩৯২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করে, পরীক্ষায় অংশ নেয় চার লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী। মোট নম্বর ছিল ১০০ এবং সময় ছিল দুই ঘণ্টা। 

জানা গেছে, উপজেলা/থানার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা/থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ বৃত্তি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক বিতরণ করা হয়। এ বছর সাধারণ গ্রেডে বৃত্তির ক্ষেত্রে আট হাজার ১৪৫টি ইউনিয়ন/পৌরসভা ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৬টি (তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী) হিসেবে ৪৮ হাজার ৮৭০টি এবং অবশিষ্ট ৬৩০টি বৃত্তি থেকে প্রতিটি উপজেলা/থানায় একটি করে ৫১৩টি সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃত্তির অর্থের পরিমাণও ২০১৫ সালের তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসে ২০০ টাকা করে দেওয়া হলেও ২০১৫ সাল থেকে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসে ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২২৫ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া উভয় ধরনের বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রতি বছর ২২৫ টাকা করে এককালীন দেওয়া হচ্ছে।

এনএম/এমজে