গত এক বছরে এমপিওভুক্ত হওয়া তিন হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের সনদ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকগুলো রাজনৈতিক বিবেচনা ও বিশেষ তদবিরের এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল এমপিওভুক্তিতে অনেক ভুল-ত্রুটি ধরা পড়ার পর নতুন এমপিওভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানে ঢালাওভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সনদ যাচাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে এ কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ কাজে সংস্থার ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিদ্যালয় শাখার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর দুই হাজার সাত শতাধিক এবং চলতি বছর আড়াইশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনা ও বিশেষ তদবিরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের জনবল এমপিওভুক্তিতে অনেক ভুল-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার তথ্য প্রকাশ পায়। এ কারণে সব প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

ঢালাও যাচাইয়ের ব্যাপারে তীব্র অসন্তোষ দেখিয়েছেন শিক্ষক ও সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, কারো বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে তার সনদ বা নিয়োগ যাচাই করতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবার নিয়োগ প্রক্রিয়া যাচাই হলে এতে হয়রানি বাড়বে।

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন শিক্ষকরা‌।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটি যাচাই-বাছাই হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানের সবকিছু যাচাই-বাছাই কাম্য নয়। সেটি হলে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হবেন। নানা অজুহাতে বিপদে ফেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ আদায় করা হবে।

যেভাবে পুনরায় যাচাই হবে
সম্প্রতি মাউশির রাজশাহী অঞ্চল অফিস থেকে আঞ্চলিক পরিচালককে (অধ্যাপক) আহ্বায়ক করে একটি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে প্রতি জেলায় একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিই নিজ নিজ অঞ্চল ও জেলা পর্যায়ে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তার যাবতীয় সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

অঞ্চল পর্যায়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়া কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, স্নাতক-পাস কলেজ ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ অংশ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন রেকর্ডপত্র যাচাই কমিটি মনোনয়ন প্রসঙ্গে কমিটিগুলো গঠন করা হয়।

গত ১৪ মার্চ জারি করা আঞ্চলিক অফিসের চিঠিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং ব্যক্তি এমপিওর ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের সব পরীক্ষার সনদ/মার্কশিট, এনটিআরসিএ নিবন্ধন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), এনটিআরসিএ মূল সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূলকপি যাচাই-বাছাই করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য নির্দেশক্রমে কমিটি মনোনয়ন দেওয়া হলো।

বিভাগীয় কমিটিতে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক, রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহীর শাহমখদুম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। আর জেলা পর্যায়ের কমিটিতেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক এএসএম আবদুল খালেক বলেন, মন্ত্রণালয়ই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এখন এমপিও যাচাই-বাছাই কাজ চলছে। তিনি বলেন, তারা নতুন প্রতিষ্ঠানের ‘স্টাফ’দের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। আগে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখন শিক্ষক-কর্মচারীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে।

কিন্তু শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সময় এর জনবল, শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন বা পাঠদানের অনুমোদন আছে সেটি বিবেচনায় নেওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ পুনরায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম জোরালো করার লক্ষ্যে গত ২২ মার্চ সব আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা করেন মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ওই সভায় এমপিওভুক্তিতে ‘ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন মাউশি মহাপরিচালক।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সনদ ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ের সব শিক্ষা কর্মকর্তাদের কড়াভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনএম/এসএম