সংগৃহীত ছবি

বদলি কার্যক্রমকে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত করতে আগামী জানুয়ারি থেকে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলির কার্যক্রম শুরু করতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এ লক্ষ্যে তৈরি করা একটি সফটওয়্যারের ট্রায়াল শেষ করেছে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি। সবার মতামতের জন্য পোর্টালটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। এরপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে সায় মিললেই জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইএমইডি শাখা এ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর অনলাইনে শিক্ষক বদলি করার জন্য ডিপিই ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে চার সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি করা হয়।

ডিপিই আইএমইডি পরিচালক বদি আর রহমানকে আহ্বায়ক ও আইএমইডির কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসার শরীফ উল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ডিপিই পলিসি ও অপারেশন বিভাগের উপপরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি। 

ট্র্যাকিং-এ থাকবে শিক্ষকদের আবেদন
তিন মাস নয়, সারা বছর চলবে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম
বদলিযোগ্য নয়, এমন শিক্ষকরা আবেদনই করতে পারবেন না 
শিক্ষক তার পিন (ই-প্রাইমারি সিস্টেম) ব্যবহার করে OTP (Authentication) এর মাধ্যমে লগইন করে নিজস্ব UI (User Interface) তে প্রবেশ করে নিজের আবেদন নিজেই করতে পারবেন 

কমিটির সদস্যরা টানা এক মাস কাজ করে সফটওয়্যারে ট্রায়াল শেষ করেছেন। ট্রায়ালের সময় দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলার একজন করে শিক্ষকের তথ্য দিয়ে আবেদন করা হয়। এছাড়াও অতীতে যেসব ক্যাটাগরিতে বদলির আবেদন করা হয় সব ক্যাটাগরির আবেদন নেওয়া হয় ট্রায়ালে। অনলাইনে যেসব সমস্যা হতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়। 

অনলাইনে বদলি ও সফটওয়্যারের সার্বিক বিষয় নিয়ে কমিটির সদস্য সচিব শরীফ উল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সফটওয়্যারের কারিগরি কাজ শেষে কয়েক দফা ট্রায়াল শেষ হয়েছে। সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। এরপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আশা করি জানুয়ারি মাস থেকে অনলাইনে বদলির কার্যক্রম শুরু করতে পারব।   

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, নতুন সফটওয়্যারে মাধ্যমে সারা বছরই বদলি কার্যক্রম চলবে। যেখানেই পদ ফাঁকা হবে সেখানে আবেদন করতে পারবেন বদলি হতে আগ্রহী শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে বর্তমান জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বদলির আবেদন করার যে যে বিধি ছিল সেটি বন্ধ হয়ে যাবে।

কারগিরি কমিটি সদস্যরা জানান, নতুন সফটওয়্যারে একজন শিক্ষক তার পিন (ই-প্রাইমারি সিস্টেম) ব্যবহার করে OTP (Authentication) এর মাধ্যমে লগইন করে নিজস্ব UI (User Interface) এ প্রবেশ করে নিজের আবেদন নিজেই করতে পারবেন। শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের তথ্যাদি আগে থেকেই ডাটাবেইজে সংরক্ষণ থাকবে। আবেদনকারী শুধুমাত্র বদলির ক্ষেত্র (আন্ত:উপজেলা, আন্ত:জেলা, আন্ত:বিভাগ এবং আন্ত:সিটি করপোরেশন) এবং বদলির কারণ সিলেক্ট করে বদলির আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের সঙ্গে মাসিক রিটার্ন, চাকরি বইয়ের ফটোকপি ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে না। তবে ক্ষেত্রমতে স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থলের বা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র, বদলির কারণ কিংবা প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হবে। বিদ্যমান বদলির নীতিমালার শর্তাবলীর আলোকে এমনভাবে সেট করা হয়েছে যেন অযাচিত কিংবা বদলির শর্তপূরণ করে না এমন কেউ আবেদনই করতে পারবে না।

শুন্যপদের সব তথ্য ডাটাবেইজে থাকবে তাই শিক্ষকরা আবেদনের সময়ই সব শুন্যপদ দেখতে পাবেন এবং এক বা একাধিক বিদ্যালয় বাছাই করে আবেদন করতে পারবেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনকারী সঠিকভাবে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনের একটি পিডিএফ কপি এবং আবেদনের ট্র্যাকিং নম্বর সংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড একটি রিসিপ্ট পাবে এবং তার মোবাইলে নোটিফিকেশন চলে যাবে। তাছাড়া শিক্ষক পিন ব্যবহার করে লগইন করে যেকোনো সময় তার ড্যাশবোর্ড থেকে আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন।

ডিপিই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সফটওয়্যারে প্রতিটি ধাপে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনটি উপরের দিকে যেতে থাকবে এবং কোনো ধাপে অতিরিক্ত সময় লাগার কোনো সুযোগ থাকবে না। কোথাও অতিরিক্ত সময় লাগলে আবেদনকারী জানতে পারবেন তার আবেদনটি অমুক ব্যক্তি বা টেবিলে পড়ে আছে বা ছিল।

কমিটির একজন সদস্য বলেন, এ সফটওয়্যারে আবেদনকারীর বদলির প্রেক্ষাপটের আলোকে সিস্টেম হতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কোর নির্ধারিত হবে। ফলে আবেদনকারী একাধিক হলে অগ্রাধিকার তালিকাও সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে। ফলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে অন্যদিকে অযাচিত তদবির ও চাপ কমে যাবে।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে এই বদলি কার্যক্রমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির (যেমন- প্রতিবন্ধী, গুরুতর অসুস্থ ও বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিধবা নারী শিক্ষক, স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত) জন্য নতুন অপশন রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর অক্টোবর থেকে অনলাইনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি শুরুর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি, মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সচিব ও মহাপরিচালক পরিবর্তনের কারণে তা পিছিয়ে যায়। তবে জানুয়ারিতে অনলাইনে বদলি শুরু করা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনলাইনে বদলি করার দাবি দীর্ঘদিনের। শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন কোনো শিক্ষককে দালাল ধরতে হবে না। হয়রানিও অনেকাংশে কমে যাবে। তবে ফাঁকফোঁকর দিয়ে কেউ যেন আবার বদলি বাণিজ্যের সুযোগ না পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বদলির ক্ষেত্রে সিনিয়রিটির বিয়য় মানা হলেই অনেক দুর্নীতি কমে যাবে। সফটওয়্যারে সেটি নিশ্চিত করবে বলে জেনেছি।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদলি কার্যক্রম পয়লা জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলে। জেলা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ আবেদন পড়ে। এ বদলি নিয়ে প্রতি বছর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ ওঠে। বদলির সময় ডিপিই ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দালালরা যোগসাজশ করে বদলি বাণিজ্যে লিপ্ত হয়।

এমন অভিযোগের কারণে গত ২৬ অক্টোবর থেকে শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রেখেছে ডিপিই। ওইদিন শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নয়জন বিভাগীয় উপপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, করোনা ও সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আপাতত বদলি বন্ধ রাখতে হবে।

এনএম/এইচকে