সংগৃহীত ছবি

করোনার কারণে এ বছর পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি-এসএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফল দেয়া হবে। আর এটা করতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। ফলে এখন শিক্ষাবোর্ডের আইন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে আটকে গেছে এইচএসসি ফল প্রকাশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা বোর্ড অর্ডিন্যান্স অনুসারে, পাবলিক পরীক্ষাগুলো পরিচালনা ও উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডগুলো। নিয়মানুযায়ী, বোর্ডগুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশের পর আইনি জটিলতা এড়াতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে এইচএসসির ফল প্রকাশের জন্য এখনও গাইডলাইন হাতে পায়নি শিক্ষাবোর্ডগুলো। 

পরীক্ষা না নেয়ায় দিতে হবে ‘অটোপাস’। এ নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস দিয়ে ফল প্রকাশের পর আইনি জটিলতা এড়াতে 'শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৯' সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে কবে নাগাদ ফল প্রকাশ করা হবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফল প্রকাশ হতে পারে বলে ধারণা করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, বোর্ডের অর্ডিন্যান্স অনুসারে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সেজন্য আইন সংশোধন করতে হবে। আর আইন সংশোধন করতে হলে সংসদ অধিবেশনও বসতে হবে। সেটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এজন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এরপরই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনের কোনো বাধা রেখে আমরা ফল প্রকাশ করতে চাই না। জটিলতা যাতে না হয় সেজন্য আইন সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে আমরা চেষ্টা করছি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশ করা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কেউ এ ফলাফল প্রকাশ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যাতে আইনি জটিলতা না হয় সেজন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত শিক্ষাবোর্ড আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার অধ্যাদেশ জারি করা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে বসেন। সভায় শিগগিরই পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তবে কাছাকাছি সময়ে যেহেতু সংসদ অধিবেশন নেই এজন্য শিক্ষাবোর্ডের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পরীক্ষা সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে একটি অধ্যাদেশ জারি করতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিলে একটি অধ্যাদেশ জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, এদিকে এইচএসসির ফল প্রকাশের জন্য এখনও গাইডলাইন হাতে পায়নি শিক্ষাবোর্ডগুলো। ফলের নম্বর সংরক্ষণের টেবুলেশন শিট তৈরি করা হয়নি।

কর্মকর্তাদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্দেশনা অনুযায়ী ডিসেম্বরেই ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছে।

ফল প্রকাশের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পরীক্ষা না নিলেও শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিতে হবে। ফলাফল কোন আইনের বলে দেয়া হবে সেজন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা লাগবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। এরপরই দ্রুত আমরা এইচএসসির ফল প্রকাশ করব।

গত ৭ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এবার এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। অষ্টমের সমাপনী ও এসএসসির ফলাফলের গড় করে এবারের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। ডিসেম্বররের মধ্যেই এই ফল ঘোষণা করা হবে।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রাধান্য দিয়ে এবারের এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফল দেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে ফল ঘোষিত হবে। 

গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও করোনা সংক্রমণের কারণে তা স্থগিত করা হয়। শুধু তাই নয়, আগামী এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।

এনএম/এইচকে