ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে দেশের পরিস্থিতি। এ কারণে ২৬ মার্চ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-মেসেঞ্জার এবং ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ ও কোচিংসহ সব ধরনের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ মার্চের পর ফেসবুক মেসেঞ্জার নির্ভর যেসব অনলাইন ক্লাস ছিল, তা বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় বন্ধ জুমসহ অন্যান্য প্লাটফর্মের ক্লাস পরীক্ষাও।

আগামী শুক্রবার (২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। এই সেবাগুলো বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। কোচিং সেন্টারের অনলাইন ক্লাস বন্ধ থাকায় শেষ মুহূর্তে কোনো সাজেশন পাচ্ছেন না তারা।

অন্যদিকে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ইচ্ছুকরাও। করোনার কারণে সরাসরি কোচিং ক্লাস বন্ধ থাকায় শুরু থেকেই অনলাইনেই চলছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। ইন্টারনেট ও ফেসবুক ডাউনের কারণে চারদিন ধরে তাদের সব ক্লাস বন্ধ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এখন প্রতিটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুন-জুলাই থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। শেষ মুহূর্তে স্পেশাল ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে এগুলো বন্ধ রয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার্থী স্বাধীন মাহমুদ বলেন, ২২ মার্চ থেকে আমাদের স্পেশাল ক্লাস ও পরীক্ষা চলছিলো। এরমধ্যে ৫টি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে ফেসবুক বন্ধ থাকায় বাকিগুলো কোচিং কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়।

এদিকে ইন্টারনেটের কম গতি ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আইরিন আক্তার সানজিদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুল ও কোচিংয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ফেসবুক ও মেসেঞ্জার। ২৬ মার্চ থেকে এগুলো বন্ধ থাকায় কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। মাঝে মধ্যে কিছু মেসেজ আসলেও সেগুলোর উত্তর দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ খুলেছি। কিন্তু সেখানেও নানা সমস্যা হচ্ছে।

রাজধানী ফার্মগেটে নবম-দশম, একাদশ,দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের কোচিং সেন্টার মেহেদী কেমিস্ট্রি কোচিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আল মেহেদি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ফেসবুক লাইভে ক্লাস নিতাম। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে ইন্টারনেটের গতি কম এবং ফেসবুক-মেসেঞ্জার বন্ধ থাকায় সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রেখেছি। বিকল্প পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুমের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে পারছে না। তাই আপাতত সব ক্লাস বন্ধ রেখেছি।

ইন্টারনেট জটিলতা ও অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলেন, সরকারের স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, করোনার মধ্যে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হলেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় চরমভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হতো। যেকোনো মেসেজ ওই গ্রুপে দিলে সব শিক্ষার্থীরা জেনে যেত। এখন ইন্টারনেটের গতি না থাকায় কোনো মেসেজ তাদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শিক্ষার্থীদের গ্যানিপন বানানো হচ্ছে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বলা হচ্ছে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হব। অন্যদিকে অনলাইনের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

এনএম/এমএইচএস