করোনায় লণ্ডভণ্ড দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরীক্ষা চলছে। করোনার আগে এবং করোনাকালীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের সনদ দিতে হলে সমাবর্তন করতে হয়। কিন্তু করোনার সরাসরি সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ সমাবর্তন এখন অনলাইনে শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল সমাবর্তন আয়োজন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ।
একই পদ্ধতিতে সমাবর্তন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে আরেকটি শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। তারা আগামী ২৫ মে ২০তম সমাবর্তন করতে চায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন সফলভাবে করার পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভার্চুয়ালি করার আগ্রহ দেখাবে। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়ালি সমাবর্তন করার অবকাঠামো রয়েছে তাদের সমাবর্তন দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব কিছুই তো অনলাইনে হচ্ছে। জুমে ক্লাস-পরীক্ষা হলে ভার্চুয়ালি সমাবর্তন হওয়া সমস্যার কিছু দেখছি না।  

জানা গেছে, করোনার পরিস্থিতিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল সমাবর্তন আয়োজন করেছে দেশের প্রথমসারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৩তম কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পুরো অনুষ্ঠানটি হয়েছে ভার্চুয়ালি। শিক্ষার্থীরা বাসায় থেকে জুমের মাধ্যমে সমাবর্তনে যোগ দেন।

ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম এম শহিদুল হাসান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদনে বলেছেন, আগামী ২৫ মে ভার্চুয়াল সমাবর্তন করতে ইচ্ছুক। যুক্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, ২০০২ সাল থেকে তারা নিয়মিত সমাবর্তন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতা ২০২১ সালের ২০তম সমাবর্তন মে মাসের শেষ সপ্তাহ অর্থ্যাৎ ২৫ মে করতে ইচ্ছুক। করোনার কারণে এ সমাবর্তন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার সব ব্যবস্থা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। এ সমাবর্তনে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির দাবি, করোনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা, বিভিন্ন সভা-সেমিনার, দাপ্তরিক সভা ভার্চুয়ালি করা হচ্ছে। আইসিটির ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়টি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। সম্প্রতি ১ থেকে ২ হাজার শিক্ষক, আলোচক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম এম শহিদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ। চাকরি ও বিদেশে যাওয়ার জন্য সনদ প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনবোধ থেকেই আমরা এ সমাবর্তন করতে চাচ্ছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত সমাবর্তন করে যাচ্ছেন। সরকার যদি অনুমতি দেয়, ভার্চুয়ালি ভালো মানের একটি সমাবর্তন করার সক্ষমতা আছে।

জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে তাদের সমাবর্তনের হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অনলাইনে কনভোকেশন আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভার্চুয়াল আবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বা তার প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রী ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন, আর শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পাস থেকে যোগ দেবেন এমন শর্তে অনুমতি পায়। শেষ মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা যাবে না— এমন শর্ত জুড়ে দিয়ে এ ভার্চুয়াল সমাবর্তন করার অনুমতি দেয়। সেই শর্তে শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নর্থ সাউথের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এ কনভোকেশনে অংশ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা পুরো কার্যক্রমটি অনলাইনে সেরেছেন। শুধু কনভোকেশনের গাউন ও ক্যাপ তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নর্থ সাউথের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে ভার্চুয়ালি এ সমাবর্তন করতে হয়েছে। কারণ সমাবর্তন না হলে শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দেওয়া যায় না। আমাদের এখান থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যায়। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ দেখতে চায়। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা অনলাইনে কনভোকেশন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নর্থ সাউথ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ সমাবর্তনে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী দুই দফায় সমাবর্তনে রীতিনীতি শেখাতে হয়। এবার যেহেতু ভার্চুয়ালি হয়েছে তাই প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীকে ধাপে ধাপে ভার্চুয়ালি গাউন ও ক্যাপের ব্যবহার শেখাতে হয়েছে। এছাড়াও ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার পর কী করা যাবে, কী করা যাবে না এসব বিষয়াদি শেখাতে গত ১৫দিন দিন ধরে মহাযজ্ঞ চলেছে। সব কিছু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। ক্ষুদে বার্তায় কনভোকেশনের রেজিস্ট্রেশন, গাউন ও ব্যাগ সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এনএম/এসএম