কারিগরিতে ডাক্তারদের মতো বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি
প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা এমন অভিযোগ করেছে দেশের ৫ লাখ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। সংকট দূর করতে হলে ডাক্তারদের মতো কারিগরিতে বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
রোববার (৫ নভেম্বর) রাজধানী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে ৮ নভেম্বর আইডিইবি'র ৫৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও গণপ্রকৌশল দিবস উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সংগঠনটি সভাপতি সভাপতি এ কে এম এ হামিদ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল কারিগরি শিক্ষার ভর্তি হার ২০২০ সালের ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালে ৫০ শতাংশে উন্নীত করবে। কিন্তু বাস্তবে ২০২০ সালের টার্গেট পূরণ হয়নি। সামনে টার্গেট কতটুকু পূরণ হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। কারণ মানসম্মত শিক্ষার চেয়ে স্ট্রাকচারে (অবকাঠামো) বেশি মনোযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষিত বেকার তৈরি বন্ধ করতে হলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি শুধু মনোযোগ নয়, দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
আইডিইবি সভাপতি এ কে এম এ হামিদ বলেন, কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে দরকার মানসম্মত শিক্ষক। শিক্ষানীতি-২০১০ এ বলা আছে, কারিগরিতে প্রতি ১২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষক। বাকি ৮২ শতাংশ শিক্ষকের পদ ফাঁকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগের চেয়ে বিল্ডিং বানাতে বেশি ব্যস্ত। আমাদের দাবি, একটি পলিটেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান চালুর আগেই কেন বিল্ডিং বানাতে হবে। আগে শিক্ষক, ল্যাব গবেষণার সামগ্রী দেন তারপর বিল্ডিং বানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, ৮২ শতাংশ শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকারও পরও তা পূরণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার দিলেও তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ঘরে পড়ে আছে। সরকারের কাছে দাবি জানাবো, করোনা মহামারি ও তার পর বিশেষ ব্যবস্থায় যেভাবে ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কারিগরিতে একই পদ্ধতিতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। না হয় এ সেক্টর বিশ্ব বাজারের চিটকে যাবে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কারিগরিতে শিক্ষা এগোতে পারছে না। কারিগরি শিক্ষায় সরকারের কাছে নানা সময় বিভিন্ন সুপারিশ দিলেও তা কর্ণপাত করছে না। এ অবস্থায় চলতে থাকলে এক সময় উদীয়মান এই শিক্ষায় মুখ থুবড়ে পড়বে।
এদিকে ৮ নভেম্বর আইডিইবি'র ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গণপ্রকৌশল দিবস উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনের আইডিইবি'র সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান জানান, জাতীয় টেকসই উন্নয়নে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গণমানুষের উদ্ভাবনী ধারণা ও উদ্যোক্তা বিকাশের বিষয়টি সামনে রেখে এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা নীতি’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে দেশের সার্বিক বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৩৫ভাগ অর্থাৎ ২৫ লাখ ৮২ হাজার কর্মক্ষম মানুষ বেকার। যেখানে উচ্চ শিক্ষিত ১২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৪ দশমিক ৯৪%, মাধ্যমিক স্তরে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাথমিক স্তরে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং শিক্ষিত নন ১ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবছর কর্মক্ষম মানুষ কর্মবাজারে যুক্ত হলেও প্রচলিত কর্মধারণায় তাদের কর্মসংস্থান সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গাণিতিক হারে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি টেকসই জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায়। বর্তমানে বাংলাদেশ জনমিতি বিভাজনের সুবর্ণ সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী ধারণার বিকাশ ও সেটির প্রয়োগে উদ্যোক্তা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি
গণপ্রকৌশল দিবস সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন শামসুর রহমান জানান, ১-৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্য প্রকৌশলীদের মাঝে শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণ, ৮ নভেম্বর ঢাকাসহ দেশব্যাপী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষকের অংশগ্রহণে আলোচনা ও আনন্দ র্যালি, ১২ নভেম্বর আইডিইবি ভবনে 'উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা নীতি' শীর্ষক সেমিনার, ৮ থেকে ১৪ নভেম্বর দেশব্যাপী বিনামূল্যে প্রযুক্তি পরামর্শ সেবা এবং ১৪ নভেম্বর ঢাকার নবীন প্রবীণ সম্মিলন ও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। যা কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে পালিত হবে। ৮ নভেম্বর বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি ও সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এ কে এম আব্দুল মোতালেব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কুদ্দুছ, মো. সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মুস্তাসীর হাফিজ, অর্থ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক মো. শাহজাহান কবির প্রমুখ।
এনএম/এমএ