বহিষ্কৃত আতিকের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, স্কুলে তোলপাড়
ফাইল ছবি
স্কুলের অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য, কেনাকাটা ও আর্থিক নানা ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলায় রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের সেই আতিকুর রহমান খানকে এক সপ্তাহ আগে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এরপরও সোমবার (১৩ নভেম্বর) হঠাৎ স্কুলের হাজিরা খাতায় তিনি সই করেছেন। এ নিয়ে স্কুলের তোলপাড় শুরু হয়। বহিষ্কৃত একজন কীভাবে হাজিরা খাতায় সই করেন তা নিয়ে দিনভর চলে আলোচনা।
স্কুলের একটি সূত্র বলছে, গত ৭ নভেম্বর তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং তিনদিনের মধ্যে তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তার জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু তার বহিষ্কারের চিঠি এখনো তার হাতে সরাসরি তুলে দিতে পারেনি আইডিয়াল কর্তৃপক্ষ। সে সুযোগে আতিক সোমবার স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। যদিও তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে বদ্ধপরিকর স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এবিষয়ে জানতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সহকারী প্রধান শিক্ষকরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বহিষ্কারের চিঠি নিয়ে যা ঘটল
বিজ্ঞাপন
স্কুলের একটি সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর বহিষ্কার হওয়ার পর আলোচিত সেই আতিক আর স্কুলের আসেননি। কিন্তু সোমবার সকালে হঠাৎ সে স্কুলের আসেন এবং হাজিরা খাতা সই করেন। স্কুলে তাকে দেখে প্রথম অবাক হলেও পরে সবাই ভাবেন, আতিক হয়তো বহিষ্কারের জবাব দিতে এসেছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন তিনি অফিস করতে এসেছেন এবং হাজিরা খাতায় সই করেছেন। সোমবার বিকাল পর্যন্ত সে স্কুলে ছিলেন।
স্কুলের একটি সূত্র বলছে, ৭ নভেম্বর তাকে বহিষ্কারের চিঠি অধ্যক্ষ অফিসের দাপ্তরিক দায়িত্বে থাকা দিবা আক্তারকে দেওয়ার জন্য বলা হয়। সে অনুযায়ী তিনি আতিককে ফোন করে অধ্যক্ষের রুমে ডাকেন। আতিক তাৎক্ষণিক সেই চিঠি না নিয়ে একদিন সময় চান। এরপর সে গতকাল রোববার পর্যন্ত আর স্কুলে আসেননি।
আরও পড়ুন
এর মধ্যে বহিষ্কারের চিঠি আতিকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। আতিক সেই চিঠি সিন (দেখা) করার পর অধ্যক্ষ তার স্ক্রিনশর্ট নেন।
এর মধ্যে আতিককে কেন বহিষ্কারের চিঠি দেওয়ার যায়নি তার লিখিত জবাব নেন দিবা আক্তারের কাছ থেকে। দিবা তিনি স্কুলে না আসার সরাসরি তাকে বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া সম্ভব হয়নি লিখিতভাবে জানান। এর মধ্যে আজ সোমবার হঠাৎ স্কুলে হাজির হন আতিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিবা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। যা হয়েছে অধ্যক্ষে স্যারের রুমেই হয়েছে। আতিক ওইদিন বহিষ্কারের চিঠি কেন নেয়নি জানতে চাইলে দিবা আক্তার বলেন, সেটাও অধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
অধ্যক্ষকে কেন লিখিত দিয়েছেন-এমন প্রশ্নে দিবা আক্তার বলেন, স্যার চেয়েছে তাই দিয়েছি। তবে লিখিততে কি লিখেছেন তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। প্রতিদিন কত কিছু লেখতে হয় সব কিছু কি মনে থাকে।
স্কুলের সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষক জানান, তিনি যখন সরাসরি চিঠি নেননি তখন উচিত ছিল ডাকযোগে তার ঠিকানা পাঠিয়ে দেওয়া। অধ্যক্ষ সেটি না করে কেন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালেন তাকে কেন স্কুলের আসার সুযোগ দিলেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তাকে নিয়ে ইঁদুর খেলা হচ্ছে না তো প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আতিকুর রহমান খানকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। আইডিয়ালের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান তাকে বরখাস্ত করে চিঠি দেন। তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের আগে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বরখাস্তের চিঠিতে যা ছিল
চিঠিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর অত্র প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। লিফট কেনাকাটায় অনিয়ম, সময়মতো সরবরাহ না করায় গত ৯ অক্টোবর আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। যার উত্তর আপনি ১২ অক্টোবর লিখিতভাবে দেন। আপনার কারণ দর্শানোর জবাব কর্তৃপক্ষের নিকট সন্তোষজনক মনে হয়নি।
গত ১৭ অক্টোবর আপনাকে লিখিতভাবে জানানো হয় যে, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপনি প্রতিষ্ঠানের মতিঝিল অফিসে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করবেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আপনি সে আদেশ যথাযথভাবে পালন না করে আপনার ইচ্ছামতো অফিসে আসা যাওয়া করছেন।
এছাড়াও গত ১৭ অক্টোবর চিঠির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিবেদন প্রদান করার কথা থাকলেও তা আপনি অবমূল্যায়ন করে যাচ্ছেন। অদ্যাবধি আপনার নিকট থেকে উক্ত কাজের কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী সমিতির স্টেশনারি বেনামে চুক্তি করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আপনি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী হিসেবে যা চাকরিবিধি পরিপন্থি। এ প্রতিষ্ঠানের চাকরি করে বিশ্বাস বাজার নামে ব্যবসা, ভিশন-৭১ নামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পরিচালনা করছেন যা চাকরিবিধি পরিপন্থি।
এসব বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানের আদেশ অমান্য, কর্তব্য অবহেলা, পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আপনার বিরুদ্ধে দুদকে তদন্ত চলছে।
এসব অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্তের স্বার্থে আপনাকে ৭ নভেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। কেন আপনাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল।
সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ে বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে বর্তমানে আপনি যে ঠিকানায় বসবাস করছেন তা থেকে অন্য কোথাও বাসা পরিবর্তন কিংবা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না
এনএম/এমএ