# নতুন করে জিপিএ-৫ : ৬১৫
# ফেল থেকে পাস : ১ হাজার ১৩৯ জন
# ফেল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করা ৭ হাজার ২০৯ জন পরীক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬১৫ জন শিক্ষার্থী, ফেল থেকে পাস করেছেন ১ হাজার ১৩৯ জন শিক্ষার্থী আর ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ১১টি শিক্ষা বোর্ড প্রকাশিত পুনর্নিরীক্ষণের ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হওয়া মানে প্রথম মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকদের বেশ গাফিলতি ছিল বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর তপন কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগে এসএসসি ও সমমানের খাতা চ্যালেঞ্জ-এ ফলাফলে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়ার পর সব পরীক্ষকদের সতর্ক করা হয়। যে কারণে এবার পূর্ননিরীক্ষণে অন্যান্য বছরের চেয়ে কম সংখ্যক ভুল পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যাটাও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই এটা শূন্যের কোটায় নেমে আসুক।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গাফিলতির কারণে ৫৭ জন পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠায় শিক্ষাবোর্ড। একই অভিযোগে শিক্ষা বোর্ডের ৬ পরীক্ষককে শোকজ করা হয়। এরপর সব পরীক্ষককে ডেকে এনে খাতা মূল্যায়নে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর খাতা মূল্যায়ণে ভুল-ভ্রান্তির পরিমাণ কমে এসেছে বলে জানান শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা। এর আগে ২০১৯ সালে এক হাজারের বেশি পরীক্ষককে শোকজ করা হয়।

জানতে চাইলে আন্তঃবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এইচএসসিতে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ভুল-ভ্রান্তির সংখ্যা আগে চেয়ে কম হয়েছে। কড়াকড়ির কারণে পরীক্ষকরা অধিক সতর্ক থাকায় এসব ভুল এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতার কারণে পরীক্ষকদের তাড়াহুড়োর মধ্যে খাতা মূল্যায়ণ করতে হয়। এজন্য খাতা মূল্যায়নে ভুল বেশি হয়।

তারা জানান, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটির মতো বিষয়ে পরীক্ষক কম কিন্তু খাতা বেশি। তাই একজন পরীক্ষককে ৫০০ থেকে ৬০০ খাতা মূল্যায়নে সময় দেওয়া হয় মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন। এ কারণে তারা তাড়াহুড়ো করেন। ফলে ভুলগুলো বেশি হচ্ছে। তারপরও কোনো ভুল ক্ষমার যোগ্য নয়। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক শেষ সময়ে এসে খাতার মূল্যায়ন শুরু করেন। এ কারণেও ভুল বেশি হচ্ছে।

২০১৯ সালে টানা তিন বছর ধারাবাহিক গাফিলতির কারণে ১ হাজার ২৬ পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোর্ডের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযুক্ত বেশিরভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করা, কাউকে সারা জীবনের জন্য কোনো বোর্ডের পরীক্ষক হতে না পারার মতো শাস্তি দেওয়া হয়। তবে যেসব পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নে কেলেঙ্কারি বা ক্রাইমে যুক্ত হন, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ এবং চাকরিচ্যুতির নজিরও রয়েছে।

কোন বোর্ডে কত জনের ফল পরিবর্তন

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ২১ হাজার ২০৮ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৩৬ জন। ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছেন ১৪৯ জন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট ৯৯৪ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ১৫২ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৯ জন।

বরিশাল বোর্ডের ৬ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তার মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ৩৬ জন, আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৩ জন।

যশোর শিক্ষা বোর্ডে মোট ৩৩৪ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ২৮ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৩ জন। এ বোর্ড থেকে ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ জন পরীক্ষার্থী।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৪৭২ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ২৪ জন। আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ জন।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ৩৬৯ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ৩১ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৮ জন।

দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে ২৯৬ জনের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ৩৯ শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২ জন।

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ৭৯৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। যার মধ্যে ৬৩ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন আর ১৩১ জন ফেল থেকে পাস করেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট ৫ হাজার ৯১৭ জন পরীক্ষার্থী ফল পরিবর্তনের আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ১৩৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছেন ৩১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪ জন।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে এবার সবচেয়ে বেশি ৮২১ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৪১ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৮ জন।

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পুনর্নিরীক্ষণে ২৫২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে নতুন করে পাশ করেছেন ৭৭ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৬ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষকদের উদাসীনতায় পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল-ত্রুটি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে অনেকে প্রথমে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে আত্মহননের মতো চেষ্টাও করেন। তাই ফলাফল যত নির্ভুল করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।

পুনর্মূল্যায়নে যেসব বিষয় দেখা হয়

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো— উত্তরপত্রের সব প্রশ্নে সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না।

তবে, পরীক্ষক কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে নম্বর দিয়ে থাকেন সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। যেমন—পরীক্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৬ নম্বর দিয়েছেন; সেটি ভুলবশত ৩ নম্বর হিসেবে গণনা করা হলো; এ ধরনের ভুল সংশোধন করা হয়। এক্ষেত্রে কোনোভাবে যেন পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় রাখা হয়। কিন্তু এই ৬ নম্বরের জায়গায় ৮ নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই।

এনএম/পিএইচ