নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার পাতা ছিঁড়ে চাকরি হারান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব। একই ইস্যুতে এবার চাকরি হারাচ্ছেন আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) একজন শিক্ষক। তাকে সরাসরি বহিষ্কার করা না হলেও সব কোর্স থেকে তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব যে অনুষ্ঠানে বইয়ের পাতা ছেঁড়েন, ওই একই অনুষ্ঠানে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে প্রতিবাদ করেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিজেই স্বীকার করে ওই শিক্ষক জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে এখনও অফিশিয়ালি টার্মিনেট (বহিষ্কার) করেনি বা আনুষ্ঠানিকপত্র দেয়নি। তবে সব ক্লাস থেকে আমাকে প্রত্যাহার করেছে।’

ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) প্রক্টর অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে ক্লাস থেকে প্রত্যাহারের কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি ইস্যু হয়নি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি আসলে তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারবো। তবে ক্লাস থেকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি ডিন অফিস বলতে পারবে।’

ওই অনুষ্ঠানে যা বলেছিলেন অধ্যাপক সারোয়ার

গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম।

ওই সেমিনারে তিনি বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে আপনাদের যদি ভেঙে ভেঙে বুঝাইতাম তাহলে আপনারা রাতে ঘুমাইতে পারবেন না। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু মারাত্মক ইস্যু। আমি এ বিষয়ে ৬ বছর পিএইচডি করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে আমার সন্দেহ হয়েছিল তাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু বুঝতে হলে জনস্বাস্থ্য বুঝতে হবে। তাহলে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটা বুঝতে পারবেন। সমকামিতা কোনো আলোচনার বিষয় না। এর কারণে কওমে লূত ধ্বংস হয়েছে। সব ধর্মে নিষিদ্ধ এ সমকামিতা। গতকাল শুনলাম আমার প্রতিষ্ঠানে আমার জন্য পলিসি তৈরি করেছে। যেন চাকরি খেয়ে দিতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে যে কথা বলবে তার চাকরি খেয়ে দিতে পারবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। সপ্তম শ্রেণির বইতে শরীফ থেকে শরীফার গল্প আছে। ‘মনে মনে নারী এবং মনে মনে পুরুষ’ এটা ভয়ংকর জিনিস।’

তিনি বলেন, ‘আমার লাইফ ঝুঁকির মধ্যে, আপনারা কি জানেন? আমার পিছনে অনেক লোক ঘুরতেছে। আমি বাইরে যেতে পারি না। আমাকে টার্গেট করে ওরা কমপ্লেইন করেছে, চাপে ফেলেছে। আমি বললাম এটা কীভাবে সম্ভব। আমরা জাতি গঠন করি। আমরা চাই সাসটেইনেবল সোসাইটি হোক, আমরা কি চাই অসুস্থ সোসাইটি হোক?’

প্রসঙ্গত, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে একটি পাঠ রয়েছে। এ পাঠের বিষয়বস্তু নিয়ে বছরের শুরু থেকেই বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস’র একটি অনুষ্ঠানে বইয়ের ওই গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর।

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক পাঠ অংশের উপস্থাপনায় কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করলে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে।’

‘বইয়ে শব্দটি ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটি আইনত স্বীকৃত, যারা জৈবিক কারণে তৃতীয় লিঙ্গ বা সামগ্রিকভাবে সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা এ দেশের নাগরিক। অবশ্যই তাদের নাগরিক সুবিধা আছে।’

এরপর বুধবার (২৪ জানুয়ারি) পাঁচ সদস্যের গঠিত কমিটিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।

এনএম/পিএইচ