জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে ক্যাম্পাসে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবেদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রতিবেদনে আট দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে ইউজিসি বলেছে, ক্যাম্পাসে সংঘটিত ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে; বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; জাবি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, হলের আসন সংখ্যার সমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

সুপারিশে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশের যে তিনটি রাস্তা রয়েছে তা বন্ধ করে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে; ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা উচিত এবং প্রতিটি স্থান নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন; শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করা ছাত্র-ছাত্রীদের হলের সিট অবশ্যই বাতিল করে হলেও অবস্থান নিষিদ্ধ করতে হবে; শিক্ষার্থীদের হলের নিয়মকানুন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।

ইউজিসির তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান, একই বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ ও সহকারী পরিচালক সেহজাদ রিফাত সিয়াম। 

ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করতে এই কমিটি গঠন করেছিল ইউজিসি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করে ধর্ষণ এবং ধর্ষণকারীকে হল থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করার কথা জানিয়েছে। 

অপরাধে জড়িত ছয়জন শিক্ষার্থীর জন্য শান্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করতে শাস্তির সুপারিশ প্রদানের জন্য প্রফেসর ড. অজিত কুমার মজুমদারকে সভাপতি করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে বহিরাগত একজনসহ অভিযুক্ত সতজনের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইতোমধ্যে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ ছয়জন শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করা হয়, যা সিন্ডিকেট সভার তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। 

ছয়জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়, যা সিন্ডিকেট সভার তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। তাছাড়া জাবি কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সেই তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ক্যাম্পাসে ধর্ষণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইউজিসির এই পরিদর্শন প্রতিবেদন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যেন তারা এই প্রতিবেদন অনুসরণ করেন।

এমএম/কেএ