প্রায় ১১ বছর ঝুলে থাকা ‘শিক্ষা আইনের’ খসড়ায় সহায়ক বইয়ের নামে নোট বই এবং কোচিংকে শর্ত সাপেক্ষে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা এ খসড়া আইনের নোট ও কোচিংসহ কয়েকটি জায়গায় আপত্তি তুলেছে জনপ্রশাসন, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ ছয়টি মন্ত্রণালয়। এসব আপত্তির ব্যাখ্যা ও খসড়া শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করতে রোববার (২ মে) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে ফের বৈঠকে বসছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়। এ বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে কোন দিকে যাবে বহু প্রত্যাশিত শিক্ষা আইন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে নোট গাইড নিষিদ্ধ রয়েছে। কিছু শর্তে চলছে কোচিং। দেশে শিক্ষার ওপর কোনো সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় যে যারা মতো করে সহায়ক বইয়ের নামে নোট বই বাজারজাত করছে। কোনো শর্তকে তোয়াক্কা না করেই দেদারসে চলছে কোচিং। ১১ বছর ঝুলে থাকার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষা আইনের খসড়া করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সেখানে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেওয়া হয়েছে ‘সহায়ক বই’কে।

সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টার চালানো যাবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা ইংরেজিসহ ভাষা শিক্ষা সেন্টারকেও নিতে হবে নিবন্ধন। এমন সব ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে ‘শিক্ষা আইন-২০২১’-এ।

খসড়া আইনটি মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর আগে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মত চাওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং-নোট গাইডের বৈধতার প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট নিষিদ্ধ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে।

এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইভেট নিষিদ্ধ করে অতিরিক্ত ক্লাসের প্রস্তাব করে শিক্ষকদের বাড়তি শ্রমের জন্য বিশেষ ভাতা (শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে) চালুর মত দিয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস করার প্রস্তাব করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এভাবে ছয়টি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারার ওপর মতামত দিয়েছে।

এসব মতামতের ওপর আলোচনা করেতে গত ১৯ এপ্রিল ভার্চুয়াল সভা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সভায় ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মতামতগুলো এখন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে রোববারের সভায় মন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করা হবে। এ বৈঠকে মূলত কী হয় তার দিকে থাকিয়েই থাকবেন সবাই। রোববারের সভায় চূড়ান্ত হলে আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রোববারের বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে। তারপর তা মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। নোট ও কোচিং এর ব্যাপারে ছয় মন্ত্রণালয়ের আপত্তির ব্যাপারে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাও রোববারের সভায় চূড়ান্ত হবে।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রাথমিকভাবে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুক্ত ছিলেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা ওই বৈঠকে যুক্ত হন।

এনএম/এসএসএইচ