করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ, যা আগামী ৫ মে পর্যন্ত চলবে। এ বিধিনিষেধের মধ্যে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থল না ছাড়তে বলা হয়েছে।

কিন্তু সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ইন হাউজ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে, যা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বয়ং প্রশিক্ষণার্থীরা।

তারা বলছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকারি সব দফতর বন্ধ থাকলেও এ বিভাগের সবাইকে নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে। কোনো কাজ নেই, তারপরও তাদেরকে অফিসে ডেকে এনে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে এ বিভাগের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে, যা রীতিমত তামাশা। 

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ইন হাউজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বের প্রথম ব্যাচে ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেবেন। ৩ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তারা প্রশিক্ষণ চলবে। এছাড়াও একই সময়ে দ্বিতীয় ব্যাচে আরও ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সর্বমোট ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সভাকক্ষে এ প্রশিক্ষণে বিভাগের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ দেবেন।

প্রশিক্ষণের যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেগুলো হলো-সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, নোট লিখন ও নথি উপস্থাপন কৌশল, নথির শ্রেণি বিন্যাস ও প্রয়োজনীয় নথি বিনষ্টকরণ, চিঠি লেখা, চিঠি গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এসব চিঠি বিতরণের পদ্ধতি, ভ্রমণ ভাতা ও বিভিন্ন প্রকার ভাতা ও চিকিৎসা সুবিধা ভাতা, জাতীয় ওয়েব পোর্টাল ও ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনা, বিভাগীয় মামলা ব্যবস্থাপনা ও গোপনীয় অনুবেদন লিখুন ও দাখিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সেগুলো এক মাস পর দিলেও সমস্যা হবে না। কিন্তু সচিব নিজের গায়ের জোরে লকডাউনের মধ্যেও আমাদের এ প্রশিক্ষণে আনাচ্ছেন। যেখানে সরকারি সব অফিসে সাধারণ কাজ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে এ ধরনের প্রশিক্ষণ তামাশা ছাড়া আর কিছুই না।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ প্রশিক্ষণটি লকডাউনের আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করা যায়নি। এখন সুযোগ এসেছে, তাই করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থী ও যারা প্রশিক্ষণ দেবেন- দুপক্ষকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণের জন্য যাদের মনোনীত করা হয়েছে তারা খুবই গুরুত্বপুর্ণ শাখায় কাজ করেন। তাই এসব বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ থাকা খুবই জরুরি।

এর আগে বিধিনিষেধে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় ১০ জন কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ।

এনএম/আরএইচ