শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন এক নারী শিক্ষক ছবি- সংগৃহীত

করোনা মহামারির কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষকরা; যাদের বেতন ভাতা হতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের বেতন ভাতায় ভাটা পড়ে। অনেক জায়গায় বেতন প্রায় বন্ধ। এতে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

এ অবস্থায় গত বছর তাদের পাশে দাঁড়ায় সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছর এ খাতে সরকার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেয়।  

এবারও শিক্ষক-কর্মচারীদের একই তালিকা ও সম-পরিমাণ টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাদের বরাদ্দ পাওয়ার পর সারাদেশের কারিগরি, মাদরাসা ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মরত নন-এমপিও ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষকের জন্য আলাদা বরাদ্দ চাওয়া হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ অনুদানের প্রস্তাবটি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের অনুমোদনের অপেক্ষায়। তবে এ টাকা তারা ঈদের আগে পাবেন কি না সেটি নির্ভর করছে ফাইল অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ের ওপর। তবে টাকা পাচ্ছেন এরকমই আমি জানি। কতজন পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর যারা এ বরাদ্দ পেয়েছিলেন এবারও তারাই পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নন এমপিও শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেজন্য প্রকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য খুঁজে বের করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (ব্যানবেইস)। প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেইসে থাকা ৬৪ জেলার ৮ হাজার ৪৯২টি স্কুল ও কলেজের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক ও ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীসহ মোট ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জনের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়।

ব্যানবেইস মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তালিকাভুক্ত ইআইএনধারী (শিক্ষাবোর্ডের বৈধ প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরণ নম্বর) নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশাল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করে।  এরপর তা স্থানীয় প্রাশাসনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়।  সেই তালিকার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ অনুদান’ খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ জেলা প্রশাসকদের কাছে সংশ্লিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুকূলে চেক/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়। চলতি বছর একইভাবে এ তালিকা ধরে অনুদানের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে এবারও নন এমপিও শিক্ষকদের আর্থিক অনুদান দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হলে সায় মেলে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় গত বছরের তালিকা ধরে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন; যা অনুমোদনের অপেক্ষায়। তার অনুমোদন পেলে ঈদের আগেই এ অর্থ বিতরণ করা হতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে কোনো বরাদ্দ পায় না। নিজেদের সামান্য আয় থেকে শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রাইভেট পড়িয়ে জীবনযাপন করেন তারা। গত বছর এসব শিক্ষক নেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের ৬৪ জেলার আট হাজার ৪৯২টি স্কুল ও কলেজের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন নন-এমপিও কর্মচারীর প্রত্যেককে দুই হাজার ৫শ’ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ‘বিশেষ অনুদান’-এর খাত থেকে এজন্য ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দেন। ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তা বণ্টন করা হয়।

মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৩৭টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আরো দুই হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ১ লাখের বেশি।

সরকারের এ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, করোনা মহামারিকালে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারের বিশেষ অনুদান প্রদানের উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করছি সরকার দ্র্রুত এমপিওভুক্ত করে আমাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবেন।

এনএম/এনএফ/জেএস