করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসায় ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরপরই বাড়তে থাকে সংক্রমণের হার। শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। পাল্টাতে থাকে পরিস্থিতি। বদলে যায় স্কুল-কলেজ খোলার তারিখ। নতুন করে তারিখ দিয়ে বলা হয়, ২৪ মে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খুলবে স্কুল কলেজও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সেই তারিখ যখন দোরগোড়ায়, ঠিক তখন দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে রোগীর শরীরে। এতে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ নিয়ে। 

বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই

১৭ মে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে। সেই বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। এই অবস্থায় হল খুলে দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। 

শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত হয়নি

এছাড়াও সারাদেশের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে সঙ্গত কারণে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভায় ১৭ মে আবাসিক হল না খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার যাবে কি না- তা পর্যালোচনা করতে গত ৫ মে বৈঠকে বসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। ফলে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ভিসি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া যায় কি না-  তা হচ্ছে না।

আগামী জুনে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা যথা সময়ে অনুষ্ঠিত নাও হতে পারে

আগামী জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২০-২১ সালের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে না বলে জানান তারা। তবে এ ঘোষণাটি তারা নিজেরা দিতে চান না। সরকারের হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নতুন তারিখ ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য পরিষদের সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে ৫ মে উপাচার্যদের মধ্যে বৈঠক ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘোষণাটি হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কেমন তা তো সবাই দেখছেন। এর মধ্যে সরকারি বিধিনিষেধ চলছে। এ অবস্থায়, করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেব। ঈদের ছুটি শেষে হলে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানান তিনি।

এদিকে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন ধরা পড়ার পর এ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে অনলাইন ক্লাসে উপজেলা শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে।

সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে পুনরায় অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করা যাবে। আর সংক্রমণ কমতে থাকলে একটা সময় সীমিত আকারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু করা যাবে। অন্যান্য ক্লাসও শুরু করা হবে পর্যায়ক্রমে। তবে সব কিছুই নির্ভয় করছে করোনার গতিবিধির ওপর।

এ বছর ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, দেশের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। তার আগে অবশ্যই করোনার টিকা নিতে হবে। হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, আবাসিক হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ৩০ মার্চ থেকে খুলে দেওয়া হবে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-কলেজ। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সেই ছুটি ২৪ মে পর্যন্ত করা হয়। 

এনএম/এইচকে