শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি: ফাইল ছবি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ নির্ধারণ করেছি। এর আগেও একাধিকবার তারিখ দেওয়া হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় খুলতে পারিনি। কামনা করছি সংক্রমণের হার যেন আর না বাড়ে। প্রার্থনা করি, যাতে নির্দিষ্ট সময়েই খুলে দিতে পারি।

রোববার (৩০ মে) রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে অনলাইনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে ‘ওয়ালটন ল্যাপটপ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি’ প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি পাঠদান বন্ধ। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে পারছি না। কিন্তু অনলাইনে আমাদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা শতভাগ শিক্ষার্থী কাছে পৌঁছাতে পারছি না। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস। জরিপের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ২৫ থেকে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস নেই। এখন পর্যন্ত আমরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। এবং ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যতটুকু সম্ভব হচ্ছে সেটির মাধ্যম আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, ওয়ালটনের কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সংবাদ। অনেক বড় খুশির সংবাদ। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আমরা অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চালু রেখেছি। তবে পর্যাপ্ত ডিজিটাল ডিভাইস না থাকার কারণে আমরা শতভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এক্ষেত্রে ওয়ালটনের কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প এবং বিনা সুদে কিস্তি সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস সহজলভ্য করবে। ওয়ালটনের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, ওয়ালটন আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান, সুপারব্র্যান্ড। ডিজিটাল ডিভাইস খাতে ওয়ালটন পথ দেখাচ্ছে; এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে। এবার ঈদে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে সবাই যেভাবে যার যার বাড়িতে গেছেন তাতে আমরা অবশ্যম্ভাবী পরিণতি দেখছি। করোনা সংক্রমণে হার পুনরায় বেড়েছে। যেটি আমরা অনেকটাই কমিয়ে এনেছিলাম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বদ্ধ জায়গা। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। উন্নত বিশ্বেও অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে চালু রাখতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনলাইনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া অন্য দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীও অনেক বেশি। বাস্তবতা মানতে হবে।

তিনি বলেন, ওয়ালটন শুধু উৎপাদন নয়, রফতানিও করছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত লাভ করছে ওয়ালটন। গার্মেন্টসের পাশাপাশি প্রযুক্তিও একটা অন্যতম রফতানিখাত হিসেব পরিচিত হবে বলে আমি আশা করি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ওয়ালটন একটা হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আমাদের কষ্ট সহ্যের ক্ষমতা আছে। ওয়ালটনের যে গন্তব্য সে লক্ষে অবশ্যই পৌঁছাবে। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে অবশ্যই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করছে ওয়ালটন। তারা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইস রফতানি করছে। যার ফলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। আশা করি ওয়ালটনের মাধ্যমে গার্মেন্টস খাতের মতো প্রযুক্তিপণ্য খাত বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি আয়ের উৎস হবে।

তিনি বলেন, ওয়ালটনের কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি নয়, এটা নিয়ে যে তাদের চিন্তা সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই।

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ, ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান।

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, ইভা রেজওয়ানা নিলু, এমদাদুল হক সরকার ও হুমায়ূন কবীর, ওয়ালটন প্লাজা ট্রেডের সিইও মোহাম্মদ রায়হান, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক আজিজুল হাকিম।

সভাপতির বক্তব্যে রেজাউল আলম বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার ক্ষুদ্র প্রয়াস থেকে আমাদের এ উদ্যোগ। আশা করছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস না থাকার কারণে একজন শিক্ষার্থীও যেন বঞ্চিত না হয়, সে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আমাদের চাওয়া সবাই যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারে। জাতি যখন শিক্ষিত হবে, শিক্ষার মান ও হার যখন বাড়বে, বাংলাদেশের অবস্থান তখন বিশ্বের বুকে শীর্ষে থাকবে। ইতোমধ্যেই গ্লোবাল মার্কেটে ওয়ালটনের গৌরবময় যাত্রা শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য খুব শিগগিরই ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে ওয়ালটন।

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ডিজিটাল প্রোডাক্টসের সিইও প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানান, করোনাভাইরাস দুর্যোগের মাঝে শিক্ষার্থীদের অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ‘কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প’ চালু করেছে ওয়ালটন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস কেনায় জিরো ইন্টারেস্টে ১২ মাসের কিস্তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে সহজেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবেন এবং অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা দেশের যেকোনো ওয়ালটন শো-রুম থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, ডেক্সটপ কিংবা অল-ইন-ওয়ান কম্পিউটার কেনার পর নিজের বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিয়ে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করবেন। এরপর সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির টাকার পরিমাণ জানিয়ে তাদের মোবাইলে একটি এসএমএস যাবে। তারা শিক্ষাবৃত্তির টাকা নগদ গ্রহণ করতে পারবেন অথবা ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্যের সাথে সমন্বয় করতে পারবেন।

এনএম/এইচকে