বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের নিয়মে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন আবেদনকারীরা। এ দাবি বাস্তবায়নে বুধবার (৯ জুন) মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, এসব পদে নিয়োগের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হচ্ছে না। প্রায় এক বছর আগে আবেদন করলেও নিয়োগ প্রত্যাশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। তাই এ পদগুলোতে নিয়োগ চলমান রাখতে দ্রুত মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া জরুরি।

গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চাকরিপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধনে চাকরি প্রার্থীরা বলেন, ২০১৮ সালে জারি হওয়া মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর জারি করা সংশোধিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী সারা দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে পত্রিকার প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আমরা আবেদন করেছি। ব্যাংক ড্রাফট-পোস্টাল অর্ডারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন করেছি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে অজ্ঞাত কারণে মাদরাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে আমাদের আবেদন করা মাদরাসাগুলো নিয়োগ দিতে পারছে না।

এদিকে গত ৩১ মে বেসরকারি স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগার প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) হাতে ন্যস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আগের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এই পদ দুটিতে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো।

২০২১ সালের সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় গ্রন্থাগার ও সহগ্রন্থাগার পদ দুটি শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগার প্রভাষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর পদ দুটিতে নিয়োগে এনটিআরসিএর সুপারিশ বাধ্যতামূলক করা হয়। নির্দেশনা জারির আগে যাদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়েছে তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি সেসব প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, হঠাৎ নতুন আদেশের ফলে, এই পদ দুইটির জন্য প্রার্থীরা দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়েছেন। তার ওপর করোনাভাইরাসের কারণে গত প্রায় দেড় বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া তেমন একটা হয়নি। যা আমাদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। স্কুল ও কলেজ ছাড়া এই পদের চাকরি সুযোগ খুবই সীমিত। ফলে এ সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য বেকার জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ প্রত্যাশী নেছার উদ্দিন বলেন, এ আদেশ জারির ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী সহকারী গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ প্রত্যাশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চাকরির প্রত্যাশায় অনেকে টাকা খরচ করে নির্ধারিত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি আলাদাভাবে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ও মাস্টার্স কোর্সে দেশের বিভিন্ন স্বীকৃত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। করোনা মহামারির কারণে চাকরির প্রত্যাশায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও যথাসময়ে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।

তিনি বলেন, ৩১ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা আদেশের আগে প্রক্রিয়া শুরু হওয়া গ্রন্থাগারিক (সহকারী শিক্ষক গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) এবং গ্রন্থাগারিক (গ্রন্থাগার প্রভাষক) পদ দুটিতে আগের নিয়মে নিয়োগ সম্পাদন করার দাবি জানাচ্ছি আমরা। শুধু প্রার্থী চূড়ান্ত নয়, প্রক্রিয়া শুরু করা সবগুলো নিয়োগ আগের নিয়মে দেওয়ার সুযোগ দিয়ে ৩১ মে জারি করা আদেশে সংশোধন চাই।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন এমপিও নীতিমালায় অনুযায়ী লাইব্রেরিয়ানদের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাই নিয়োগের স্বচ্ছতা আনতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ রাখা হবে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এনএম/এসকেডি