শিগগিরই শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন কার্যক্রম। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ আছে- অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন সংকেত পাওয়ার পর আবেদন কার্যক্রম শুরুর জন্য উদ্যোগী হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নতুন কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে তা এখনও জানা যায়নি। ২৫০ কোটি টাকা এ খাতের জন্য বরাদ্দ আছে এমনটা ধরেই এগুচ্ছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রোববার (১৩ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ২০১৮ সালের মতো এবারও অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য এরইমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ নতুন সফটওয়্যার তৈরি করে পরীক্ষামূলক তথ্য আপলোড করে দেখেছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সফটওয়্যার তৈরি হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মোমিনুর রশিদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন দ্রুত নেওয়া হবে। অনলাইনে আবেদন নেওয়ার জন্য আমাদের সফটওয়্যার তৈরি শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে কমিটির সদস্যরা তথ্য আপলোড করে দেখেছেন। এখন মন্ত্রীকে দেখাব। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে আবেদন নেওয়া শুরু করব।

এমপিও শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৯ সালে যোগ্যপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বরাদ্দ থাকলেও টাকা ফেরত গেছে। এবার এমপিও নীতিমালায় শর্ত শিথিল করায় অনেক যোগ্যপ্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে। নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। কেউ তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত হয়ে ধরা পড়লে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বছর কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে তা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাজনের পর বলা যাবে। এবার টাকার কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের নানা খাত রয়েছে। সেসব খাত থেকেও অর্থ মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করলে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ দিতে পারে।    

আগামী অর্থ বছরের বাজেটে এমপিও খাতে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল কেউ স্পষ্ট করছেন না। তবে সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য দুইশত কোটি এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বরাদ্দ বাড়ানের জন্য চেষ্টা করছে। যে কারণে বাজেট পাসের আগে কেউ মুখ খুলছে না।

প্রায় ১০ বছর পর ২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। তখন এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করেছিল। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২ হাজার ৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রের হার্ডকপি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে ২ হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরমধ্যে বহু প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক-কর্মচারীও এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। ২০১৯ সালের শেষ দিকে বিশেষ ক্ষমতা বলে সরকার আরও ৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল। ওই সময়ে এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেই তালিকাভুক্তির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল চূড়ান্ত বাছাইয়ে।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের নামে প্রতিষ্ঠিত কিছু প্রতিষ্ঠানও বাদ পড়ে। তখন সরকার ঘোষণা করেছিল, এমপিওভুক্তি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু এমপিও নীতিমালা সংশোধন করতে প্রায় দুই বছর সময় লাগায় কমিটি। নীতিমালার কঠোর শর্তের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমপিও খাতে বরাদ্দ চার শত কোটি টাকার বেশি ফেরত যায়। তখন নন-এমপিও শিক্ষকরা শহর ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে নীতিমালা সংশোধনের দাবি করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে।

সম্প্রতি এ নীতিমালা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়া কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সংশোধিত নীতিমালা জারি করে তোপের মুখে প্রত্যাহার করে নেয়। এখন পর্যন্ত সংশোধিত নীতিমালা জারি করতে পারেনি।

সূত্র জানায়, গত দুই বছরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংশোধিত নীতিমালায় একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য মার্কিং তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারাদেশে সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, মফস্বল এলাকার কলেজের পক্ষে নতুন নীতিমালার শিক্ষার্থীর শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে না। আগের নীতিমালার চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শর্তের কারণে বহু বছর ধরে পাঠদান চালিয়ে আসা কলেজগুলো এমপিওর সুযোগ বঞ্চিত হয়ে এক সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হারের শর্ত শিথিল করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।  

এমপিও নীতিমালায় যা আছে

গত মার্চে জারি করা বেসরকারি স্কুল ও কলেজের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা-২০২১ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে পাসের হার ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা শিথিল করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর তুলে দেওয়া হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ২৫ নম্বরের স্থলে ৪০ করা হয়েছে। অন্য ক্যাটাগরির ২৫ নম্বরের স্থলে ৩০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামের প্রতিষ্ঠানও এমপিও করা হবে না। নেতিবাচক নামের কারণে সমাজে প্রভাব পড়তে পারে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না।

এমপিওভুক্তিতে পাসের হার শিথিল

এমপিওভুক্তির জন্য সিটি করপোরেশন এলাকার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও পাসের হার ৭০ শতাংশ, জেলা শহরে ৩৫ জন পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ৬৫ শতাংশ, মফস্বলে ২৫ জন পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ৬০ শতাংশ। সিটি করপোরেশন  ও জেলা শহরের মাধ্যমিক স্কুলে পরীক্ষার্থী ও পাসের হার একই। তবে মফস্বল এলাকায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ঠিক থাকলেও পাসের হার কমিয়ে ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে। 

সিটি করপোরেশন এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী ৬০ জন ও পাসের হার ৬৫ শতাংশ, জেলা শহরে পরীক্ষার্থী ৬০ ও পাসের হার ৫৫ শতাংশ, মফস্বলে ৪৫ জন পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ৫০ শতাংশ থাকতে হবে। 

সিটিতে স্নাতক (পাস) স্তরে পরীক্ষার্থী ৬০ জন ও পাসের হার ৬০ শতাংশ, জেলা শহরে পরীক্ষার্থী ৬০ জন ও পাসের হার ৫০ শতাংশ,  মফস্বল এলাকায় ৫০ জন পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ৪৫ শতাংশ থাকতে হবে। তবে সিটি ও জেলা শহরের মহিলা কলেজের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ জন নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এনএম/এইচকে/জেএস