করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় জুন মাসেও খুলছে না স্কুল-কলেজ। ফলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প হিসেবে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এতে গত বছরের এইচএসসির মতো অটোপাসের তকমা থেকে রক্ষার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখেছে তারও একটা মূল্যায়ন করে গ্রেড দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আগের পরীক্ষা জেএসসি ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলকে আমলে নেওয়া হতে পারে। মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।  

এদিকে রোববার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এক বছর পরীক্ষা না দিলে বড় কোনো ক্ষতি হবে না।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষাবোর্ডের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি।

জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য বলা হয়েছে। সে অনুসারে আমরা কাজ শুরু করেছি। সোমবার থেকে ২০২২ সালের এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। চলতি বছরের পরীক্ষার্থীদের জন্য খুব শিগগিরই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে।

তিনি বলেন, ক্লাসে পড়ানোর পর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তারপরও যদি সম্ভব না হয়, যদি এটি না করতে পারি, তবে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে গ্রেড দেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি। প্রশ্নপত্র তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের হাতে তুলে দেবে। তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাবে। তবে কত সংখ্যক প্রশ্নপত্র বা অ্যাসাইমেন্ট সেট হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এসব শুরু হয়েছে, শেষ হওয়ার পরে সংখ্যা জানা যাবে।

এবার ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। গত এক যুগ ধরে এসএসসি পরীক্ষা সাধারণ ১ ফেব্রুয়ারি এবং এইচএসসি ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবার ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসের দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ড। এতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়। এ সিলেবাস নিয়ে পরিকল্পনা ছিল স্কুল খোলার পর ক্লাসে যতটুকু সিলেবাস পড়ানো হবে ততটুকু ওপর পরীক্ষা হবে। স্কুল খুললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিনে ক্লাস নেওয়া হবে। ক্লাস চলাকালীন কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এমনকি টেস্ট পরীক্ষাও না নিয়ে সবাইকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস নেওয়ায় বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বর কমানো হয়।

এনএম/ওএফ