শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের ছবি

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েক ধাপে ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মহামারির মধ্যেই ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে বই বিতরণ শুরু করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।  তবে সবকিছুই নির্ভর করবে দেশে করোনা পরিস্থিতির উপর।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ক্ষমতায় থাকার এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে একটি অনুষ্ঠানের ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার মার্চ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

অন্যদিকে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুরা যাতে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসতে পারে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন স্বাভাবিকভাবে পুনরায় শুরু করতে পারে সরকার সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তাহলে কি ১৬ জানুয়ারির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ও প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে কথা বলতে চাননি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার যখনই ঘোষণা দিবে তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে আমরা প্রস্তুত। আর বই বিতরণের মাধ্যমে মূলত আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরো বাড়বে কি না এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি জানান, এটি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং করোনা সংক্রান্ত গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিসহ প্রাথমিক মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকবে। বৈঠকে তাদের মতামত নিয়ে সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা বর্তমান ছুটি শেষ হওয়ার দুদিন আগেই সবাইকে জানিয়ে দেবো।

• আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক মন্ত্রণালয়
• বই বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি
• করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৩ ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে

জানা গেছে, নতুন বই বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছ সরকার। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিন ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়, একাদশ এবং মাধ্যমিকের আংশিকভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে ক্লাস শুরু করা হবে। সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শিক্ষক-কর্মকর্তারা মাঠে উপস্থিত থেকে বই বিতরণ করছেন। মাঠ কর্মকর্তাদের এ কার্যক্রম মনিটরিং করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ১২ দিন ধরে নতুন বছরের বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এ কার্যক্রমের শিক্ষক-কর্মকর্তা সবাইকে মাঠে থাকতে হচ্ছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সরকারি ঘোষণা আসলেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। মাউশি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা, সংক্রমণ রোধকরণ, দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে এগুলো অনুসরণ করেই ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

করোনার কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমান, প্রাথমিক সমাপনী এবং জেএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে সরকার।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতি শিগগির খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। বুধবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশের তিনি এ আহ্বান জানান।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখে।

এনএম/এমএইচএস