২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় করে ব্যাপক সহিংসতা চালানো হয়। এর পেছনে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় শতাধিক নেতা গ্রেফতার হন। এরপর বিভিন্ন মহলে দাবি উঠে কওমি মাদরাসাগুলোকে রাজনীতিমুক্ত করার। গত এপ্রিলে কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রচলিত রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মাদরাসাগুলোর নীতি নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে কওমি বোর্ড।

আরও পড়ুন: কোন রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছে তারা?

বুধবার (১৬ জুন) বোর্ডের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগের সিদ্ধান্ত (রাজনীতি মুক্তকরণ) বহাল রেখে তা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব কওমি মাদরাসাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন থেকে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা যেন রাজনীতিতে যুক্ত হতে না পারেন সেজন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব মাদরাসার প্রধানদের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যদি কোনো ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কওমি শিক্ষাবোর্ডের অফিস সম্পাদক মু. অছিউর রহমান বলেন, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রচলিত রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে গত এপ্রিলে বোর্ডের নেওয়া সিদ্ধান্ত বুধবারের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব মাদরাসার প্রধানদের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হবে। খুব শিগগিরই এ চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। 

জানা গেছে, এপ্রিল মাসে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্য আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার পাঁচ বোর্ডের পাঁচজন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে পাঁচজন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সমন্বয়ে সর্বমোট ১৫ জনের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ সাব-কমিটির নাম দেওয়া হয় ‘বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাব-কমিটি’। বুধবারের সভায় সাব-কমিটিতে আরও দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সাব-কমিটি’র আহ্বায়ক করা হয়েছে বোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানকে।

কওমি অঙ্গনে বিরাজমান অস্থিরতা থেকে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা এবং ওলামায়ে কেরামের মান বজায় রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির জন্য গত ২৫ এপ্রিল স্থায়ী কমিটির সভায় কওমি আলেমরা ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেগুলো হল- কওমি মাদরাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে একমাত্র আল-হাইআতুল উলয়া। কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া পৃথকভাবে কওমি মাদরাসার বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নিতে পারবে না। কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সব রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে। এসব বাস্তবায়ন করতে ১৫ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়।   

বুধবারের সভার শুরুতে আল-হাইআতুল উলয়ার সদস্য, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং মতিঝিল জামিয়া দ্বীনিয়া শামসুল উলূম পীরজঙ্গী মাজার মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা ছফিউল্লাহ (র.) এর মাগফিরাত কামনা করা করে দোয়া করা হয়।

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে দেশবাসীসহ বিশ্বমানবতার জন্য দু‘আ করা হয়; উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুসলমানদের হয়রানী না করার জন্য এবং গ্রেফতারকৃত আলেম-উলামা ও সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়।

এনএম/আরএইচ