করোনার কারণে চলতি বছরের আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা নাকি আবারও অটোপাস দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসির ৩৪ লাখ শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বেলা ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভার্চুয়ালি এই সংবাদ সম্মেলন করবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড মন্ত্রণালয়‌ সূত্রে জানা গেছে, এবার আর অটোপাস দেওয়া হচ্ছে না।‌ বিকল্প যেসব পদ্ধতি রয়েছে তার একটি হচ্ছে, রচনামূলক কিংবা সৃজনশীল অংশ বাদ দিয়ে কেবল এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষা নেওয়া। অন্যটি হলো বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া। যেমন- দুটি বিষয় একীভূত করে একটি বিষয় করা। এ ক্ষেত্রে ২০০ নম্বরের বিষয়গুলো ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া। 

এ দুটি বিষয় থেকে যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কীভাবে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন হবে তার একটি রূপরেখা প্রকাশ করতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী।

২০২১ সালের ঝুলে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য একাধিক প্রস্তাব তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহু নির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেওয়া। বিষয় ও পূর্ণমান (পরীক্ষার মোট নম্বর) কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের দুই পত্র একীভূত করা।

পাশাপাশি ২০০ নম্বরের বদলে ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এমনটি সম্ভব না হলে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাস অ্যাকটিভিটিসের ওপর ৫০ শতাংশ ফলাফল নিয়ে ফল প্রস্তুত করা হতে পারে। এইচএসসির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর এসএসসির ফলের ৫০ শতাংশ, জেএসসির ২৫ শতাংশ ও অ্যাসাইনমেন্টের ফলের ২৫ শতাংশ সমন্বয় করে ফল প্রকাশের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে সেই সিদ্ধান্তও পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শিক্ষা বোর্ডগুলো ফলাফল প্রকাশের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, আমরা এখনো পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে।‌ করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এখনো পড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই এ সংক্রান্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।‌ প্রধানমন্ত্রী কোনটি অনুমোদন করেছে তা শিক্ষামন্ত্রী জানাবেন। ‌

কী হবে বার্ষিক পরীক্ষার
গত বছর করোনার কারণে স্কুলে অভ্যন্তরীণ বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষের দিকে অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হলেও তা মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়। এবার সেটি হবে না বলে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা। আজকে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী।

জানা গেছে, এবার অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরের ভিত্তিতে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ করা হবে। কোনো অবস্থায় তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে না। যেসব অ্যাসাইমেন্ট দেওয়া হচ্ছে তার ওপর নম্বর দেওয়া হবে। বার্ষিক পরীক্ষা নিতে না পারলে এ নম্বর যোগ করে তা বিবেচনা করা হবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, যে অ্যাসাইনমেন্টগুলো দেওয়া হচ্ছে তা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। কোনো কারণে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হয়, তবে এগুলো মূল্যায়ন করে নম্বর দেওয়া হবে। যে অ্যাসাইমেন্টগুলো দেওয়া হচ্ছে তা খুবই ডিটেইল করে দেওয়া হচ্ছে। এটা সঠিকভাবে করা হলে শিক্ষার্থীদের খুবই বেশি ঘাটতি থাকবে না।

এনএম/ওএফ