স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আনন্দ আশ্রম সেবা কার্যক্রম’ এর প্রথম বর্ষপূর্তি আজ। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী ১২টি বৃদ্ধাশ্রমে এক বেলা বিশেষ খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে সংগঠনটি।

রোববার (২৫ জুলাই) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর, গাইবান্ধা ও বরিশালের ১২টি বৃদ্ধাশ্রমে দুপুরে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে চাল-ডালসহ খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

‘স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছ মোদের অধিকার, আমরা নবীন নিশ্চয়ই হবো গর্বিত অধিকার’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে গত বছরের ২৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ব চক্রবর্তী ও দীপম সাহার উদ্যোগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় হাইশুর বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম, ওষুধ, খাদ্য সামগ্রী, তাদের ব্যবহারের জন্য তোয়ালে এবং একটি টেলিভিশন বিতরণের মাধ্যমে এই স্বেচ্ছাসেবী প্লাটফর্মটি যাত্রা শুরু করে।

হাইশুর বৃদ্ধাশ্রম থেকে যাত্রা শুরু হওয়া এই প্লাটফর্মটি এখন পর্যন্ত  দেশের ১২টি জেলায় অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রমে চাহিদামত ১৫-২০ দিনের খাদ্যসামগ্রী, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও প্রবীণদের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র বিতরণ করেছে। পাশাপাশি ‘মুজিববর্ষের স্লোগান, তিনটি করে গাছ লাগান’ এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে ১০টি করে ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছে।

করোনা মহামারিতে বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের একাকী জীবনে মানবিক সঙ্গ দিয়েছে। সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিয়ে ‘টকিং কিউর’ পদ্ধতিতে তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গোপালগঞ্জ জেলা থেকে শুরু হয়ে এই কার্যক্রম ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর, গাইবান্ধা ও বরিশালের বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে সেবা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যােলের শিক্ষার্থী হিসেবে তারা প্রতিটি জেলা ঘুরে ঘুরে সেবাদানের  মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করছে। এই কাজের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। দেশের বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিকদের এই শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়িয়ে বৃদ্ধাশ্রমগুলোর সেবার মান বাড়াতে অনুরোধ জানাচ্ছি।'

সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা অপূর্ব চক্রবর্তী অপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংকটে সমাজের অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের মতো দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর দিকেও যেন আমরা দৃষ্টি দেই। তাদের কেউ না কেউ আমাদের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের কথা মাথায় রেখে অবহেলিত সেই মানুষগুলোর পাশে আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাঁড়ানোই কর্তব্য বলে মনে করেছি। নিজেদের ব্যক্তিগত সময় ও অর্থ ব্যয় করে আমরা বঙ্গবন্ধুর মানবিক আদর্শকে ধারণ করে এ কাজে করছি।

তিনি বলেন, দেশের বৃদ্ধাশ্রমগুলোকে আমরা কেন্দ্রীয়করণ করতে চাই। এর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, বৃদ্ধাশ্রমগুলোর সার্বিক উন্নয়ন ও তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করব। খাদ্য, চিকিৎসা সংকট দূরীকরণে আমরা ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি।

তাদের কীভাবে আনন্দ দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের গল্প শুনি, আমাদের গল্প শুনায়। তাদের মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করি। যাতে তারা একাকীত্ব অনুভব করতে না পারে এবং পরিবার, নাতি-নাতনিকে ছেড়ে থাকার কষ্ট ভুলে যায়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি তাদের আনন্দ দিতে, জানি না কতটুকু পেরেছি। তবে আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে থাকতে চাই।

আরেক উদ্যোক্তা দীপম সাহা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে ঝুঁকিতে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী। এদের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে যারা থাকেন তাদের একাকীত্ব, হতাশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাকালীন ভয়াবহতা। মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হতে পারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন ও মুজিববর্ষের সর্বোত্তম অঙ্গীকার।

এইচআর/ওএফ