ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি বরাবরই উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। Erudera.com-এর তথ্য অনুসারে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। কিন্তু করোনা মহামারি এবং দূতাবাসের কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

মহামারির শুরু থেকে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত বছরের জুলাই মাসে দূতাবাস তাদের ভিসা অ্যাপয়েনমেন্ট খুলে দেয়। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র রায়হান বলেন, গত বছর জুলাইয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী দূতাবাসে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট রেজিস্ট্রেশন করলেও দূতাবাস ভিসা সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি। এজন্য তারা বরাবর লকডাউন এবং দূতাবাসের কর্মী সংকটকে দায়ী করেন জার্মানিতে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৬ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জার্মান দূতাবাস কাছে সাক্ষাৎকারের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীদের তালিকা সম্বলিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তারা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেনিংয়ের কারণে দূতাবাস কয়েক দফায় কাজ শুরু করলেও, সেটা খুব সীমিত এবং অল্প সময়ের জন্য হওয়ায় এই সমস্যার সমাধান হয়নি। এখন পর্যন্ত গতবছরের জুলাই মাসের আবেদনকারীদের ভিসা প্রসেস সম্পূর্ণ শেষ হয়নি।

এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে গতমাসে স্টুডেন্ট ভিসাকে জরুরি সেবার আওতায় এনে লকডাউনের বিধি-নিষেধের বাইরে রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ নিয়ম মেনে ঢাকাস্থ অন্যান্য দূতাবাস ও মিশনগুলো স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে নিয়মিত কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বেশিরভাগ দূতাবাসগুলোর প্রায় তাদের সব শিক্ষার্থীদের ভিসা ইন্টারভিউ শেষ করে ফেলেছে।

কিন্তু জার্মান দূতাবাস সরকারি প্রজ্ঞাপন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের চিঠি পাওয়ার পরও কাজ শুরু করেনি। শিক্ষার্থীদের টুইটারে একের পর এক চাপের পর সদ্য বিদায়ী অ্যাম্ব্যাসেডর তার টুইট বার্তায় ভিসার কাজ শুরু করতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি নতুন ভিসা কনস্যুলেট এবং নতুন টিম বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু তারপরও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভিসা নিয়ে কাজ শুরু করেনি দূতাবাস। শিক্ষার্থীদের একজন বুলবুল খান বলেন, আমি ইতোমধ্যে দেশে বসে দুই সেমিস্টার শেষ করেছি অনলাইনে। ব্লক এবং টিউশন ফি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাঠিয়েও দিয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, যেহেতু পরের সেমিস্টার আর অনলাইনে হবে না তাই আমাকে অক্টোবরের মধ্যে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে হবে। তা না হলে আমার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

এমন পরিস্থিতে দ্রুত কাজ শুরু করার অনুরোধ নিয়ে দূতাবাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করলে তাদের জানানো হয়, তাদের কর্মী সংকট দূর হয়েছে এবং তারা পুরোদমে কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বিদেশী কর্মীরা নিয়মিত অফিস করলেও, দেশি ভিসা অফিসাররা লকডাউনের কারণে অফিস করতে পারছেন না। তারা ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন এবং লকডাউনের মধ্যে বাসা থেকে দূতাবাসে যাতাযাত করছে পারছেন না।

কিন্তু লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারির পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম টুইট বার্তায় জার্মানগামী শিক্ষার্থীদের জানায়, আমরা সব দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দিয়েছি যেন তারা স্টুডেন্ট ভিসা কার্যক্রম চালু রাখে এবং সেই সঙ্গে ডিএমপিকেও ভিসা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের চলাচলে সহায়তার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি চলমান কঠোরতম লকডাউন প্রজ্ঞাপনেও ভিসা কার্যক্রমকে লকডাউন আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

এ অবস্থায়, দেশে আটকা পড়া হাজার হাজার জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দূতাবাসের দেশি ভিসা অফিসারদের লকডাউনের মধ্যে নিরবিঘ্নে অফিসে যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চেয়েছেন।  

এনএম/এসএম