অনুমোদনহীন কোর্স-ক্যাম্পাস চালাচ্ছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে অননুমোদিত  ক্যাম্পাস বন্ধ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবার সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদনহীন কোর্স-ক্যাম্পাস নিয়ে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

গত ৩১ জুলাই সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের এ চিঠি দেন। চিঠিতে অনিয়ম, অনুমোদনহীন কোর্স ও ক্যাম্পাস পরিচালনা করা এবং শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। মানসম্পন্ন, আধুনিক, কর্মোপযোগী উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী একসঙ্গে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমনের প্রবণতা কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, মেধা পাচার রোধ, দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী তৈরিসহ বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।’

‘‘দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতাদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বৈঠক, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাফল্যে আমরা গর্বিত।’’

‘একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অনুমোদনহীন কোর্স ও ক্যাম্পাস পরিচালনা, বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, ট্রাস্টি বোর্ডে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।

প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা না করার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এ ব্যাপারে জনমনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টির পাশাপাশি সরকার এবং উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন।’

চিঠিতে ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে আরও বলা হয়, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সব মহলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) বক্তব্য ও মতামত প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও বিধির সীমাবদ্ধতা এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালার সংশোধন, সংযোজনের প্রস্তাব, সুপারিশ থাকলে সমিতি বরাবর জরুরিভিত্তিতে পাঠানোর জন্যও অনুরোধ করা হলো।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি করোনাকালে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সচল রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী দিনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হবে বলে সমিতি মনে করে। সে ক্ষেত্রে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য।’

‘সমিতি আশা করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবে এবং উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্জিত সুনাম ও অবদান অক্ষুণ্ণ রাখতে সহায়তা করবে।’

এ চিঠি পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যমে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নানা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, যা নিয়ে এই খাতে ইমেজ সংকট তৈরি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে যেন কোনো খারাপ ধারণা তৈরি না হয় তাই শুদ্ধিকরণের জন্য এ চিঠি দিয়েছি।’

এনএম/এইচকে