মহামারি করোনার ছোবলে লন্ডভন্ড দেশের শিক্ষা খাত। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হচ্ছে বিক্রিও। চাকরি হারাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষাস্তরের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেশের অন্যতম বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাঙ্গন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)।

মহামারিতে শুধু অনলাইন শিক্ষাতেই সফল নয় প্রতিষ্ঠানটি, একইসঙ্গে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশে দাড়িয়েছে নর্থ সাউথ পরিবার। করোনার মধ্যেও বিভিন্ন ফি শতভাগ মওকুফ, মেধাবী ও অভাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি হিসাবে ১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তাসহ বাবা-মা হারানো শিক্ষার্থীদের বিশেষ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২২৩ কোটি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ মহামারিতে চাকরিচ্যুত হননি। বন্ধ হয়নি বেতন ভাতা, এমনকি স্বাভাবিক সময়ের মতোই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা পেয়েছেন বোনাস। শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, টিউশন ফি মওকুফ, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পড়ালেখা করার সুযোগ দেওয়াসহ অন্যান্য সুবিধাও দিচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৯৩ সাল থেকে (স্প্রি সেশন) এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ২২৩ কোটি টাকা, যা দেশের যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনন্য উদাহরণ।

জানতে চাইলে নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে গত ১২ মাসে তিন সেমিস্টারে সব শিক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি মওকুফ করা হয়েছে। স্টুডেন্ট-অ্যাক্টিভিটি ফি শতভাগ মওকুফ করা হয়েছে। মোট মওকুফের পরিমাণ ২০ শতাংশ। মেধাবী ও অভাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি হিসেবে ১৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যে শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা-মা হারিয়েছে, তাদের জন্যও বিশেষ বৃত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে।

২০০১ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ১১১ শিক্ষার্থীকে প্রতিটি সেমিস্টারে ব্যক্তিগত অনুদান সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যে ‘কোভিড স্পেশাল ফি মওকুফ হিসেবে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ১১৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।

২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ কার্যকরের পর এখন পর্যন্ত এনএসইউতে এক হাজার ৩৩৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছাত্রত্ব পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত টিউশন মওকুফ বাদেও মহামারি পরিপ্রেক্ষিতে সব শিক্ষার্থীর জন্য কোভিড স্পেশাল টিউশন মওকুফ হিসাবে ৮৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পিতা মাতা হারিয়েছেন, এমন ৫৪ শিক্ষার্থীকে মহামারীর বিশেষ কেস হিসেবে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।

এদিকে, ইউজিসি ও এনএসইউ’র আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত তথ্যে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তাদানকারী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে নর্থ সাউথ। অথচ ভর্তি, টিউশন ফিসহ কোনো ফি-ই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নয়। 

এনএম/আরএইচ