করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের পাঁচ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত জুনে এ অর্থ ছাড় করা হলেও শিক্ষকদের তালিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মিল না থাকায় এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৪৮ হাজার ৫৩৩ জন টাকা পেয়েছেন।

অন্যান্যদের টাকা কীভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ওই টাকা ছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনআইডি যাচাই করে টাকা ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শিক্ষকদের এনআইডির সঙ্গে নিবন্ধিত মোবাইলের মিল না থাকাসহ নানা জটিলতায় পৌনে এক লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর অনুদানের টাকা ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এনআইডি যাচাই করে অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।    

বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, ‌‘নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদানের অর্থ ছাড়ের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের এনআইডি সঠিক রয়েছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে তাদের অনুদানের অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থবিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

গত ৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন ইআইএনধারী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুমানিক এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তালিকা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে শিক্ষকপ্রতি পাঁচ হাজার ও কর্মচারীপ্রতি আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইবাস প্লাস সিস্টেমে শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য আপলোড দেওয়ার সময় দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকার বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারীর এনআইডির সঙ্গে জন্ম তারিখ বা নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর সঠিক পাওয়া যায়নি। এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৪৮ হাজার ৫৩৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য আইবাস প্লাস সিস্টেমে সফলভাবে আপলোড করা হয়।

আইবাস সিস্টেমে সফলভাবে আপলোড হওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে এনআইডির সঙ্গে মোবাইল নম্বর এবং জন্ম তারিখ মিল না থাকায় ৭৬ হাজার ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য ইনপুট দেওয়া সত্ত্বেও সফলভাবে আপলোড হয়নি। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনুদান হিসেবে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুকূলে ৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়। কারণ, বেশিরভাগ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। যাদের আছে তাদের আবার নামসহ নানা ধরনের ভুলে ভরা।

আবার অনেকের মোবাইলে অ্যাকাউন্টই নেই। তারা অন্যের ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’ নম্বর দিয়েছেন। যাদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট ছিল তাদের অনেকের এনআইডির সঙ্গে নামের মিল নেই। এসব কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা পাঠাতে পারেনি।

এ অবস্থায় শিক্ষক নেতারা গত বছরের মতো এবারও এনআইডি দেখে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অর্থ ছাড়ের আবেদন জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪২ জন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের এনআইডি যাচাই করে অর্থ ছাড়ের চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম অর্থ সংকটে পড়েন দেশের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয় না। এসব শিক্ষকরা মূলত; প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য অর্থ বা প্রাইভেট পড়িয়ে জীবন-যাপন করেন।

গত বছর শিক্ষক নেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৮ হাজার ৪৯২টি স্কুল ও কলেজের এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা করা হয়। তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার ‘বিশেষ অনুদান’ খাত থেকে এই টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও ইউএনও তাদের তৈরি তালিকা অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক অনুদানের টাকা বণ্টন করেন। প্রত্যেক শিক্ষককে পাঁচ হাজার টাকা ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। এবারও সমপরিমাণ অর্থ একইভাবে বিতরণ করা হবে।

মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৩৭টি প্রতিষ্ঠান। একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আরও দুই হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

এনএম/ওএফ