প্রতীকী ছবি

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই ওই বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হয়। কিন্তু ২০২১ সালে করোনার প্রকোপে পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। ফেব্রুয়ারি মাসের পরীক্ষা এখন নভেম্বরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত বছরের এইচএসসিতে অটোপাস দেওয়া হলেও এবার এসএসসি বা এইচএসসিতে সেটা ঠেকাতে সব ধরনের ছাড় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্বাচনী পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে এসএসসিতে ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী বেড়েছে। সময় শেষ হওয়ার পরও ১ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী নতুন করে ফরম পূরণের জন্য আবেদন করেছে। এক, দুই বা তার বেশি বিষয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা এখন গণহারে ফরম পূরণ করতে বোর্ডে যোগাযোগ করছে। অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বোর্ডে আসছে।

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন ছিল কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে ফরম পূরণ করেনি প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। যদিও এসব শিক্ষার্থীকে ড্রপআউট হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় শিক্ষাবোর্ড। তারপরও ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ৬৫ হাজার বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। নতুন করে আরও কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে চায়।

উল্লেখ্য, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছর ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছিল। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সব বোর্ডের অধীনে গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ফরম পূরণ করেছে ২১ লাখ ৫ হাজার ১২৫ জন।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফরম পূরণের সময় চেয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এক হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তারা ফরম পূরণের জন্য নতুন করে সময় চেয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ফরম পূরণের সুযোগ চেয়ে প্রতিদিনই অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আসছেন।  

সিরাজুল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি, গণিত ও আইসিটি বিষয়ে ফেল করে। মাঝে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এখন সে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

ফরম পূরণের নির্ধারিত সময়ে আসেননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনী পরীক্ষা ছাড়াই অনেকটা অটোপাসের মতো সুযোগ দিয়েছে। তাই মনে হলো, পরীক্ষা দেওয়া উচিত। 

তবে সিরাজুলের সঙ্গে থাকা মেয়ে বললেন, আমি যে তিনটি বিষয়ে ফেল করেছি এবার এগুলোর পরীক্ষা হবে না। তাই পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী খুব একটা কমেনি। নির্বাচনী পরীক্ষা না হওয়ায় এবার নিবন্ধনকারী সবাই চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। এরপরও প্রথমদিকে ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি আগ্রহ না থাকলেও অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষার খবরে পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে গত দু-তিন বছরে অকৃতকার্য হওয়া বা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ বাকি রয়েছে।

জানা গেছে, গত মার্চ মাসে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু হয়। এপ্রিল মাসে লকডাউন দেওয়ার পর তিন দফা সময় বাড়িয়ে গত ২৩ জুন শেষ হয় ফরম পূরণের সময়। এরপরও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ন্যূনতম এক লাখ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি বা করতে পারেনি বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফরম পূরণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন।

যারা এখনো ফরম পূরণ করেনি বা করতে পারেনি তাদের আবারও সুযোগ দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, করোনাসহ নানা কারণে ফরম পূরণ করতে পারেনি এমন অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বোর্ডে আসছেন। অনেকেই লিখিত আবেদন করেছেন। অনেকেই ফরম পূরণের জন্য নানা মাধ্যমে বোর্ডগুলোতে যোগাযোগ করছেন। এদের ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, অটোপাস বা অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে ফলাফল হবে- সরকারের এমন ঘোষণার পর থেকেই সব অনিয়মিত বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নিতে উৎসাহী হচ্ছে।

এনএম/এইচকে/জেএস