মো. মাসুম মিয়া

রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় চতুর্থ সেশনের ক্লাস শুরুর ঘণ্টা দিচ্ছেন কর্মচারী মো. মাসুম মিয়া। দীর্ঘ ১৭ মাস পর স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়ে চোখে-মুখে আনন্দের আভা মাসুম মিয়ার। 

স্কুলের বারান্দায় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মাসুম মিয়ার। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টা বাজাতে পেরে ঈদের আনন্দের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছি। কতদিন পর! আমি চাই প্রতিদিন আমার হাতে স্কুলের ঘণ্টা বাজুক। ঘণ্টা বাজানো আমার কাছে কতো আনন্দের, সেটা ভাষায় বোঝাতে পারব না।’

মাসুম মিয়া ছাড়াও আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুল খুলে দেওয়ায় তারা খুব খুশি। স্কুলের শিক্ষক সোমা ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা সশরীরে শ্রেণিকক্ষে নেই। যদিও অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতে পেরে সবাই খুব খুশি। শিক্ষার্থীরাও খুশি ক্লাসে আসতে পেরে।’

স্কুলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে ঘরবন্দি। স্কুল খুলে দেওয়ায় কী যে আনন্দ লাগছে, আপনাকে বোঝাতে পারব না। কতদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। প্রতিদিন যদি ক্লাস হতো আমার কী যে খুশি লাগত।’

উল্লেখ্য যে, করোনাকে জয় করে ৫৪৩ দিন পর স্কুল-কলেজ খুলেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এক ধরনের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। করোনার ছোবলে গত বছর ১৭ মার্চ সরকার দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল।

এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একাধিকবার শ্রেণি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সংক্রমণের দাপটে তা আর হয়ে ওঠেনি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কোথাও সংক্রমণের হার একটানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশে স্থিতিশীল থাকলেই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে শনিবারও সংক্রমণের হার ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। অবশ্য এটা আগের দিনের তুলনায় প্রায় দেড় শতাংশ কম। সেই হিসাবে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি পাঠদানের জন্য ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা হলো। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৩ কোটি শিক্ষার্থী। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে এখন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে না। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, খোলার সঠিক সময় মনে করেই আজ দেশে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকায় কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণের হার একেবারে ৫ শতাংশে না হলেও এর কাছাকাছি নেমে আসবে। তার ভিত্তিতেই কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা এই সময়টাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যথার্থ সময় মনে করেছি।’

এনআই/ওএফ