ছেলে-মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসারের চাকা ঘুরে একমাত্র জালাল উদ্দিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে। আর সেই জালালের আয় নির্ভর করত স্কুলের ভ্যানের চাকা ঘোরার ওপর। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে, গাড়ির চাকা ঘোরাও বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে থেমে যায় এ চালকের জীবিকার চাকাও। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুশি তার মতো এমন অসংখ্য ভ্যান চালক। কারণ তাদের আশা, এবার ভ্যানের চাকায় কাটবে সংসারের আঁধার।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা স্কুলের মাঠের এক কোনায় পড়ে আছে চারটি স্কুলভ্যান। তালা দেওয়া ভ্যানগুলো রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজেছে। এখন সেগুলোর খুব নাজেহাল অবস্থা। কোনো ভ্যানের চাকায় হাওয়া নেই, আবার কোনটিতে জং ধরে গেছে। শিক্ষার্থীদের বসার সিটগুলোও নষ্ট হয়ে আছে। চালকের বসার সিটও ভেঙে আছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা স্কুলের ভ্যান চালক জালাল উদ্দিন। তিনি জানান, আগে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে স্কুল থেকে ভ্যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বাসায়-বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতেন। স্কুল ছুটি শেষে দুই শিফটে আবার শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। আর এ কাজ করে তার মাসে উপার্জন হতো ১০ হাজার টাকার মতো। এর বাইরে স্কুলের অন্য কাজ করে আরও আট হাজার টাকার মতো উপার্জন হতো। এ আয়ে খুব ভালোভাবে চলে যাচ্ছিল তাদের সংসার। কিন্তু করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেলে সংসারে শুরু হয়ে যায় অভাব-অনটন। উপায় না পেয়ে পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। এ সময় নিজে রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে যা আয় করেছেন, তা দিয়ে নিজের এবং পরিবারকে কোনোরকমে চালিয়ে নিয়েছেন।

জালাল উদ্দিন বলেন, এখন আবার স্কুল খোলায় আমি খুশি। আজ যদিও ভ্যান চালিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে আনতে যাইনি। কারণ এখনও অভিভাবকরা যোগাযোগ করেননি। আশা করছি, এ সপ্তাহ থেকে আবার ভ্যান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার কাজটি শুরু হবে। তবে আজ থেকে স্কুলের কাজ শুরু হয়েছে। আগের মতো আবার উপার্জন হলে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসব। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। তাদের লেখা-পড়া তো বন্ধ হয়ে গেছে। সেটা তো আবার শুরু করা দরকার।

জালাল উদ্দিনের মতো আরও তিন জন চালক এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভ্যানে করে আনা-নেওয়ার কাজটি করতেন। এ চালক বলেন, স্কুলের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানে আসা-যাওয়া করে। চার জন চালক তাদের আনা নেওয়ার কাজটি করতেন। করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া সবাই চাকরি হারিয়েছেন। তবে স্কুল খোলায় তারাও আবার কাজে ফিরতে পারবেন বলে আশা জালালের। আবারও সচল হবে ভ্যানের চাকা, সেই সঙ্গে থেমে যাওয়া জীবিকার চাকাও সচল হবে।

এএইচআর/এসএসএইচ