শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন আইডিয়া ছাড়া কোনো দেশ এগোতে পারে না। তাই শিক্ষা, কৃষি, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে তরুণদের নতুন নতুন আইডিয়া বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করতে সরকার কাজ করছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে।

‘মুজিব শতবর্ষ আইডিয়া প্রতিযোগিতা ২০২১’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে শিক্ষামন্ত্রী প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ডা. দীপু মনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম আগামীর নেতৃত্ব দেবে। তাদের বুদ্ধিমত্তা ও আইডিয়া দেশকে সমৃদ্ধ করবে। আমাদের নতুন পথ দেখাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আইডিয়া প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকসহ দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে উদ্ভাবনী ধারণা পেতে আইডিয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এন জিয়াউল আলম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ইউজিসি সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও আইডিয়া প্রতিযোগিতা বিষয়ক কমিটির সভাপতি ড. শাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন এবং আমাজন ওয়েব সার্ভিসের সল্যুশনস আর্কিটেক্ট লিডার মোহাম্মদ মাহদী উজ জামান।

অনুষ্ঠানে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ, কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউজিসি’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইডিয়া প্রতিযোগিতা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মুজিব শতবর্ষ আইডিয়া প্রতিযোগিতা তরুণদের নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে। এর মাধ্যমে আগামীর সেবা খাতগুলোর সমস্যা সমাধানের উপায় চিহ্নিত করার পথ উন্মুক্ত হবে। এসব খাতের বিদ্যমান সমস্যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, তথ্য বিশ্লেষণ এবং ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, এ আয়োজনে দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনের সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ঘটবে। সম্মেলনটি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের গবেষক এবং অনুশীলনকারীদের একত্রিত করতে সহায়তা করবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশনগুলোর বিনিময় এবং ব্যবহারিক উন্নয়নের পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত প্রচারকে উৎসাহিত করবে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে সব খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও উদ্ভাবনী চর্চার বিকাশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মুজিব শতবর্ষ আইডিয়া প্রতিযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প কারখানার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে সহায়তা এবং গবেষণার মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।

মুজিব শতবর্ষ আইডিয়া প্রতিযোগিতা

এ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন কিছু আইডিয়া একত্রিত করা হবে, যার দ্বারা প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এই প্রতিযোগিতা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জীবন ও পরিবেশকে উন্নত করবে।

স্থানীয় উদ্ভাবন, বিশ্বব্যাপী পদার্পণ শিরোনামে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক উদ্ভাবন ধারণা জমা দেওয়া যাবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, স্মার্ট শহর ও গ্রাম, কর্মসংস্থান, ই-গভর্ন্যান্স, পরিবহন ও পর্যটন, পরিবেশ, রিটেইল ও ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং ও আর্থিকসহ ১০টি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ধারণা দিতে পারবেন।  

উদ্ভাবন ধারণায় এসব ক্ষেত্রের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় ভবিষ্যৎ ন্যুনতম টেকসই পণ্য ফরমেটে প্রদান করতে হবে। এ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত ১০০টি আইডিয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা এবং সেরা ১০টি আইডিয়ার জন্য ১ কোটি টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। এসব আইডিয়া বাংলাদেশ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ইনকিউবেশনের মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। উদ্ভাবনী ধারণা বাংলা অথবা ইংরেজি যেকোনো মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য https://bn.ic4irb.org/mujib100ideas ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

এনএম/এমএইচএস