প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খোলার প্রথম ১৫ দিন সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে শিক্ষাঙ্গনে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রথম দুই মাসে নেওয়া যাবে না কোনো পরীক্ষা ।

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) রাতে জারি করা গাইডলাইনে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ইউনিসেফ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থসেবা বিভাগ জারি করা বিভিন্ন নির্দেশনা মোতাবেক এ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব গাইডলাইন বাস্তবায়ন করতে পারবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যান্য গাইডলাইনও শিক্ষার্থীর শিখন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনে যুগোপযোগী করতে পারবে।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় তৈরি করা ৩৮ পৃষ্ঠার গাইডলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

গাইডলাইনে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ আকর্ষণীয় করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিফটিং করে নিরাপদ দূরত্বে ক্লাসে বসাতে হবে। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী থেকে আরেকজন শিক্ষার্থীকে ৩ ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করে বসাতে হবে। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও অভিভাবকের মতামতের ভিত্তিতে এবং প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম ১৫ দিন কোনো একটি শ্রেণি কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবশিক্ষা কার্যক্রম একইসঙ্গে চালু করতে হলে কতটি শিফট প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি শিফটের জন্য কর্মঘণ্টা কতটুকু হবে তা নির্ধারণের পরিকল্পনাও নিতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় কন্টাক্টলেস থার্মোমিটার স্থাপন এবং তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বাড়িতে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পথে ও অভিভাবকদের বসার স্থানে ৩ ফুট দূরত্বে করতে হবে মার্কিং।

সবার জন্য মাস্কের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী মাস্কের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত না থাকেন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে হটলাইন নম্বর দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে।

সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষার্থীরা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলাফেরা করতে পারে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থারও পরিকল্পনা নিতে হবে।

প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম এক বা দুই সপ্তাহ পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মনোসামাজিক সহায়তা এবং মানসিক ও শারীরিক কার্যক্রমের মধ্যে খেলাধুলা, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা, সঙ্গীত চর্চা, ছবি আঁকা, সামাজিক সেবামূলক কাজ করতে নির্দেশনা রয়েছে। 

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রথম দুই মাসের মধ্যে এমন কোনো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা বা মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যাবে না যা শিক্ষার্থীর ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকর্ষণ বাড়াতে প্রতিষ্ঠান ভবন রং করা, বিভিন্ন ছবি দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ডেকোরেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিকল্পনামাফিক প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক প্রয়োগসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্ব বণ্টন, নির্দিষ্ট সময় পর পর ২০ সেকেন্ড ধরে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে জোর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারের জন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে লিফলেট বিতরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনএম/এসআরএস