করোনার কারণে বাতিল হওয়া ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল আগামী রোববার (৩১ জানুয়ারি) প্রকাশ হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি ফল প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। 

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল প্রকাশের প্রস্তাব পাঠানো হয়। আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে পারবেন এমন বার্তা পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে ওইদিন সময় চাওয়া হয়েছে।

দুপুরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একটি সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষাবোর্ডকে ফল প্রকাশের সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে এইচএসসি ফল প্রকাশে আইনি আর কোনো জটিলতা নেই। আমরা শিগগিরই ফল প্রকাশ করব। নিদিষ্ট তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মাসেই হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। 

এনসিটিবির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোব ও সোমবার সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুধবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহ প্রায় শেষ। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ওই দুইদিন ফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেজন্য রোববার ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সময় দেওয়ার ওপর।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ জনুয়ারি) রাতে বিশেষ পদ্ধতিতে ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষাবোর্ডকে ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ফল প্রকাশ করতে শিক্ষা বোর্ডের আর কোনো বাধা রইল না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি ( বিএম), এইচএসসি (ভােকেশনাল), ডিপ্লোমা ইন কমার্স-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায়, বাংলাদেশ শিক্ষা বাের্ড ( সংশােধন) আইন, ২০২১ এর ৮ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ সংক্রান্তে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ মােতাবেক ২০২০ সালের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি ( বিএম ), এইচএসসি ( ভােকেশনাল )/ ডিপ্লোমা ইন কমার্স - দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত , প্রকাশ ও সনদ বিতরণের জন্য শিক্ষা বাের্ডকে ক্ষমতা দেওয়া হলাে।

এদিকে ফল প্রকাশের জন্য সব কারিগরি দিকগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন শিক্ষাবোর্ডের এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি। সিস্টেম এনালিস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ ও সনদ শাখার কর্মকর্তারা বার বার ফলাফলের কারিগরি দিকগুলো যাচাই-বাছাই শেষ।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফল প্রকাশের জন্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা দেওয়ার পর আইনগত কোনো বাধা নেই। যেকোনো মুহূর্তে ফল প্রকাশ করতে পারি।

তবে ফল প্রকাশের আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নেওয়াসহ আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা যেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু করেছে। এগুলো শেষ হলে ফল প্রকাশ করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না পাওয়ার পর্যন্ত দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।

এদিকে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে সংসদে পাস হওয়া তিনটি সংশোধিত আইনের গেজেট জারি করা হয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তিনটি বিলে সম্মতি দেন। বিল তিনটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর সেগুলো আইনে পরিণত হয়।

গত অক্টোবর মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার না নিয়ে জেএসসি এবং এসএসসি ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে।  জেএসসিতে ২৫% এবং এসএসসিতে ৭৫% ধরে এ ফল তৈরি করা হবে।

২০২০ সালে ৯টি সাধারণ, কারিগর ও মাদ্রাসা মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।

এনএম/এসএম