করোনা মহামারি সময়ে বিশেষ মূল্যায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরীক্ষা ছাড়াই আগের পরীক্ষার ফলাফলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকাশ হবে এইচএসসি ও সমমানের ফল। পরীক্ষা না হওয়ায় এবার শতভাগ পাস ঘোষণা করা হয়। পূর্বের জেএসসি-এসএসসি ফলাফলে গড়ে এইচএসসিতে ফল তৈরি করা হয়েছে। এতে রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিন্তু এ ফলাফল তৈরিতে কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তা নিয়ে সবার আগ্রহ। 

গত ৭ অক্টোবর এমন তথ্য জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, জেএসসি ও এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ ধরে বিষয়ভিত্তিক গড় নম্বর দিয়ে ফলাফল তৈরি করা হবে। 

মন্ত্রী জানান, এর ফলে এবার কোনো শিক্ষার্থী ফেল করবে না। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সব বিষয় রাখা হবে। কোনো বিষয় বাদ দেওয়া বা নম্বর কমিয়ে মূল্যায়ন করা হবে না।

যেভাবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয় ম্যাপিং করা হয়েছে
সাধারণভাবে জেএসসি/ সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসি ২০২০ এর ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে। জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার অবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরে ৭৫ শতাংশ বিবেচনা করে এইচএসসিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/ সমমান পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিন সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

জিপিএ উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

বোর্ডের পরীক্ষকরা জানান, বিষয় ও বিভাগ পরিবর্তনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও পরীক্ষা ছাড়া প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফলে ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ পায়নি। এছাড়াও আরো বহু শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, জেএসসি ও এসএসসিতে অনেক শিক্ষার্থী ৮০ নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। বিষয়ভিত্তিক ম্যাপিং করতে গিয়ে জেএসসিতে ২৫ ও এসএসসিতে ৭৫ শতাংশ নম্বরের গড় করতে গিয়ে তারা জিপিএ-৫ পায়নি। তিনি আরো বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এসএসসিতে ৮০ নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক গড় ম্যাপিং করতে গিয়ে ৭৭-৭৮ নম্বর পেয়েছে। এসব কারণে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি। এসএসসিতে অনেক বিষয় ছিল যেগুলো জেএসসিতে ছিল না। ম্যাপিং করতে গিয়ে অনেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

এর আগে গত ৭ অক্টোবর ২০২০ সালে পরীক্ষা বাতিল করার পর জেএসসি-এসএসসি ফলের উপর এইচএসসির জিপিএ গ্রেড নির্ণয় করতে আট সদস্যের একটি গ্রেড মূল্যায়ন টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয় আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও  ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে। এছাড়া কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।

কমিটি একাধিক বৈঠক করে জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি এ দুই পরীক্ষার ফলের ওপর শিক্ষার্থীর গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করেন। এছাড়া যারা বিভাগ পরিবর্তন করেছে তাদের বিষয়গুলো আগের পরীক্ষায় ছিল এমন বিষয় না থাকলে কাছাকাছি বিষয়ের সঙ্গে মিলানো হয়। এভাবে তারা চারটি সভা করে একাধিক প্রস্তাব তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়। এর ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরি করে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত করেছে। যা শনিবার প্রকাশ করা হয়।

এনএম/ওএফ