নিয়োগজটে আটকা পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তরা। প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে।

জানা গেছে, ৩৮ হাজারের মধ্যে ৩২ হাজার ২৮৩টি ফরম পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে সেগুলো এখনো ফেরত আসেনি। ফলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারছে না। তাতে হতাশ নিয়োগপ্রার্থীরা।

এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত শূন্যপদ ধরে গত ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ৫৪ হাজার ৩০৪টি পদ ফাঁকা ছিল। ১৫ জুলাই তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা হয়। তবে ৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশের কথা থাকলেও ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জনকে এবং নন-এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে। আর ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটা পদে নারী প্রার্থী না পাওয়ায় মোট ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেলেও স্থবির হয়ে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।

জানা গেছে, প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও পুলিশ প্রত্যয়ন ফরম (ভি-রোল) না পাঠানো ৫ হাজার ২৯৫ জনের তালিকা ‍উল্লেখ করে তাদের ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ভি-রোল পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে এনটিআরসিএ।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যাদের ফরম পাইনি ওয়েবসাইটে তাদের রোল নম্বর দিয়েছি। তারা ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। এরই মধ্যে আড়াই হাজারের মতো ফরম পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যেসব আবেদন পাব আমরা সেগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠিয়ে দেব।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে অনেকগুলো ভেরিফিকেশন হয়ে গেছে। সবগুলো এলে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করব।

এই ৩২ হাজার ও পরবর্তী ফরমগুলো এলে এক সঙ্গে নিয়োগ হবে নাকি আগে পরে হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে বলব, তারপর সিদ্ধান্ত হবে। তবে আগে পরে নিয়োগ হতে পারে।

নিয়োগপ্রত্যাশী শান্ত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঁচ মাসেও নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। সেটা কবে শেষ হবে তাও জানি না। এদিকে, ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। ৩৮ হাজার প্রার্থী অসহায় জীবনযাপন করছে। 

তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করে নিয়োগের দাবি জানান।

আরেক নিয়োগপ্রত্যাশী আমিনুল ইসলাম অনন্ত বলেন, মুজিববর্ষে ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর সদিচ্ছা ছিল বলেও মনে হয় না।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এটা সম্পন্ন করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। তার মাশুল দিচ্ছেন নিয়োগপ্রার্থীরা।

জানতে চাইলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ৩২ হাজারের বেশি ফরম পেয়েছি। আমরা সেগুলো সব ডিভিশনে ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। ভেরিফাই শেষ হলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। তদানুযায়ী তারা নিয়োগের ব্যবস্থা নেবে।

কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন করছে। আশা করছি, দ্রুতই এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।

এএজে/ওএফ