জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়ননি ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী। তারা কেন জিপিএ-৫ পাননি তার ব্যাখ্যা লিখিতভাবে দেবে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ জন্য শিক্ষার্থীদের বোর্ডে আবেদন করতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। 

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর থেকেই বোর্ডে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভিড় বেড়ে গেছে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর ফোন আসছে বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে। সবাই তার সন্তান কেন জিপিএ-৫ বা কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি তার ব্যাখ্যা চাচ্ছেন। বিশেষ করে ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী যারা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও পায়নি এইচএসসিতে তারা বেশি ফোন করছেন এবং বোর্ডে আসছেন। এরই প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ কেন পায়নি তা লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। 

• জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি ৩৯৬ শিক্ষার্থী 
• লিখিতভাবে কারণ জানাবে শিক্ষা বোর্ড
• জেএসসি ও এসএসসিতে না পেয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ ১৭ হাজার ৪৩ শিক্ষার্থীর

রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন কল্যাণপুর গার্লস স্কুল থেকে এবার জিপিএ-৫ বঞ্চিত হওয়া এক শিক্ষার্থী ও তার মা। ওই শিক্ষার্থী চেয়ারম্যানের কাছে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও এইচএসসিতে কেন জিপিএ-৫ আসেনি তা জানতে চান। ওই শিক্ষার্থী জানান, এসএসসির বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি বিষয়ে তার গড়ে নব্বইয়ের বেশি নম্বর ছিল। তারপরও তিনি জিপিএ-৫ পাননি।

চেয়ারম্যান তার সব বিষয় ম্যাপিং করতে গিয়ে জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থী জেএসসিতে গণিতে ‘ডি’ গ্রেড (৩৩-৩৯ নম্বর) পায়। এ কারণেই তিনি জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

অন্যান্য গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে তাদেরও ব্যাখ্যা দেব। এছাড়া ফল রিভিউ করার সুযোগ তো থাকছেই।

প্রফেসর নেহাল আহমেদ

বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, ঢাকা বোর্ডের মাত্র ৯২ জন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জিপিএ-৫ বঞ্চিত  শিক্ষার্থীরা কেন সর্বোচ্চ গ্রেড পায়নি তা লিখিতভাবে জানাব। সেজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আবেদন করতে হবে। অন্যান্য গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা লিখিত আবেদন করলে তাদেরও ব্যাখ্যা দেব। এছাড়া ফল রিভিউ করার সুযোগ তো থাকছেই। 

শনিবার প্রকাশিত এইচএসসির ফলে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাননি এমন ১৭ হাজার ৪৩ জন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অন্যদিকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ছিল কিন্তু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি ৩৯৬ জন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করায় জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ পাননি।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২০ ফলাফল প্রণয়নে জেএসসি বা জেডিসি এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিষয় ম্যাপিং পদ্ধতি সম্পর্কে ফলাফলের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে- সাধারণভাবে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসির আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসিতে আবশ্যিক এই তিন বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমানের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাওয়া গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি বা সমমানের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন এবং উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নিয়ে যথাক্রমে এইচএসসির পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পাওয়া গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসির গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলের পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়, গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পাওয়া গড় নম্বরের ২৫ শতাংশের সঙ্গে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছরের ১ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল এই পরীক্ষায়। তবে করোনা মহামারির কারণে এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। এতে সবাই পাস করেছেন।

এনএম/এইচকে