হাসিটা সবসময় ঠোঁটে লেপ্টে থাকে। এটা তার গুণ, বৈশিষ্ট্য নাকি মোহাবিষ্ট করার সুকৌশল, বলা মুশকিল। সেই হাসির ফাঁক গলে যেসব কথা ঝরে পড়ে, তা যেন ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনার ছকে সাজানো। তিনি রাফিয়াত রশিদ মিথিলা।

সেদিনের বইমেলা তখনো জমে ওঠেনি। মধ্যাহ্নের সূর্যকে মুহূর্তের জন্য ফাঁকি দিয়ে গাছের ছায়ায় তার মুখোমুখি হলাম। যদিও বইমেলায় তার ঝটিকা সফর ছিল বইকেন্দ্রিক, তবু সেই প্রসঙ্গ সেরে সিনেমার করিডোরে চোখ ফেলতে চাইলাম। সায় দিলেন মুচকি হেসেই।

দীর্ঘদিন ধরেই শোবিজের সঙ্গে যুক্ত মিথিলা। কাজ করেছেন বিভিন্ন নাটক, বিজ্ঞাপনে। কিন্তু সিনেমায় তাকে পাওয়া যায়নি। অথচ গত এক বছরে তিনি রীতিমতো চমকে দিয়েছেন। গুনে গুনে চারটি সিনেমার কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন। হাতে রয়েছে আরও কয়েকটি।

শান্তভাবে বয়ে চলা নদীর মতো ক্যারিয়ারে হঠাৎ এমন জোয়ার আসার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি? জবাবে মিথিলা বললেন, ‘প্রায় তেরো-চৌদ্দ বছর ধরেই আমি একটি এনজিওতে কাজ করছি। সেটার পাশাপাশি টুকটাক অভিনয় করতাম। লম্বা সময় ধরে কাজ করছি বটে। কিন্তু সংখ্যা খুম কম। নাটকের জন্য যতটা সময় বের করতে পারতাম, শুক্র-শনিবার, ছুটির দিন; এভাবে কাজ করেছি। সিনেমা করব, এটা কখনো ভাবিওনি। তাছাড়া ওই সময়ে যেরকম সিনেমা হতো, আমার পছন্দ হতো না। আবার সেটার জন্য লম্বা সময় বের করাও কঠিন ছিল। এখন নাটকে অভিনয় করছি না বললেই চলে। সেই সময়টুকুই সিনেমার জন্য দিচ্ছি আরকি।’

২০১৯ সালে মিথিলা ঘর বেঁধেছেন ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে। সিনেমায় আসা, ব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কি তবে স্বামীর প্রভাব আছে? স্পষ্টবাক্যে মিথিলা বললে, ‘একদমই না। এখানে সৃজিত একেবারেই সম্পর্কিত না। সিনেমায় কাজের জন্য অনেক আগে থেকেই অফার পাই। সময় বের করতে পারি না বলেই হয় না। এখন কিছুটা সময় পাচ্ছি বিধায় কাজ করছি। তাই বলে খুব বেশি করছি, এমনও না। যেমন কলকাতায় দুটি এবং বাংলাদেশে দুটি সিনেমা করলাম। আর একটি ওয়েব সিরিজ। এইতো।’

সিনেমার গল্প-চিত্রনাট্যে মোটেও ছাড় দিতে চান না মিথিলা। নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছেন। তার ভাষ্য, ‘বর্তমানে যে ধরণের কাজ হয়, এরকম কাজই আমি করতে চাই। আর এখন যেহেতু কলকাতায় থাকি, সেখানে ভালো ভালো সিনেমার অফার পাচ্ছি, তাই করছি। আসলে যেখানেই থাকি না কেন, কাজ তো করতে হবে।’

নতুন আরও কয়েকটি সিনেমায় ভারি হচ্ছে মিথিলার ঝুলি। সম্প্রতি গুণী নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের নির্মিতব্য ‘কাজল রেখা’য় যুক্ত হয়েছেন। জানালেন, আরও একটি সিনেমা নিয়েও আলাপ চলছে। শিগগির হয়ত সেটাতেও চুক্তিবদ্ধ হবেন। এছাড়া কলকাতায় নতুন আরেকটি সিনেমায় শিডিউল দেওয়া আছে। কিছুদিন বাদে ওটার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনেত্রী।

‘কাজল রেখা’য় মিথিলাকে দেখা যাবে নেতিবাচক চরিত্রে। সহজ করে বললে খলনায়ক। এমন চরিত্র বাছাইয়ের কারণ জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাকে কখনো কেউ নেতিবাচক চরিত্রে দেখেনি। সেজন্যই এটি করছি। আমি যেহেতু খুব কম কাজ করি, সেক্ষেত্রে একটু ভিন্ন ধরণের চরিত্রই বেশি ভালো লাগে।’

তার ব্যস্ততা আর রোদের চোখ রাঙানি দেখে আলাপে ছেদ টানতে হলো। এর আগ মুহূর্তেই জানালেন, রোববার (৬ মার্চ) চলে যাবেন কলকাতায়। এমন তড়িঘড়ি ফিরে যাওয়ার কারণ কী? নতুন কোনো প্রজেক্ট? এক ফালি হেসে দায়িত্বশীল মায়ের মতো বললেন, ‘আমার মেয়ের স্কুল খুলছে। এটাই বড় প্রজেক্ট। তাই যেতে হবে।’

এরইমধ্যে মিথিলা চলে গেছেন সিটি অব জয় খ্যাত কলকাতায়। সেখানে তাকে ও মেয়ে আইরাকে পেয়ে উৎফুল্ল সৃজিত। সবাই মিলে ঘুরতে-খেতে বের হয়েছেন। পারিবারিক আনন্দে ঘেরা মুহূর্তের কয়েক টুকরো ফ্রেমবন্দি করে ভক্তদেরও দেখিয়েছেন এই তারকা দম্পতি।

কেআই/আরআইজে