শোবিজ এমন এক ঝলমলে দুনিয়া, যেখানে অল্পতেই অর্থ, খ্যাতি পাওয়া যায়। কিন্তু স্রোতের মতো আসা সেই অর্থ-খ্যাতি ধরে রাখার যোগ্যতা না থাকলে তা অল্পতে হারিয়েও যায়। তখনই নেমে আসে সীমাহীন হতাশা, মানসিক অবসাদ।

এ কারণেই তরুণ প্রজন্মের তারকারা অল্পতে ঝরে পড়েন, হতাশ হয়ে যান বলে মনে করেন টলিউডের গুণী অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। গতকাল থেকে কলকাতার বিনোদন জগত শোকাচ্ছন্ন। কারণ তরুণ অভিনেত্রী পল্লবী দে’র মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। কলকাতার গড়ফা এলাকায় অভিনেত্রীর বাসা থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, এটা আত্মহত্যা নাকি খুন।

পল্লবীর রহস্যজনক মৃত্যুর খবরে শোকাহত শ্রীলেখা মিত্রও। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার প্রস্তাব, প্রত্যেক ইউনিট থেকে প্রতি মাসে সবার (অভিনেতা, অভিনেত্রী) মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা দরকার।’

রোববার (১৫ মে) সকালেই একটি আনন্দের সংবাদ পান শ্রীলেখা। নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এই আনন্দ স্থায়ী হলো না। পল্লবীর খবর পেয়েই মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে তার। শ্রীলেখা বলেন, ‘সমস্ত আনন্দ যেন থমকে গেল! ভীষণ বিষণ্ণ আমি। মাত্র ২৫-এই আরও একটি সম্ভাবনা ঝরে গেল। এবং আবারও প্রমাণিত, বিনোদন দুনিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা, টক্কর, অবসন্নতার শিকড় গভীরে গেঁথে বসেছে। এর থেকে যেন মুক্তি নেই!’

কেন বারবার তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীলেখা বলেন, ‘একাধিক কারণ রয়েছে। আমরা পরিণত হয়ে বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখেছিলাম। ৩০০ টাকা দিয়ে উপার্জন শুরু। আস্তে আস্তে সেটা বেড়ে ৫০০, ৭০০ টাকা হয়েছে। এখনকার প্রজন্ম খুব ছোট বয়সে পা রাখছে ইন্ডাস্ট্রিতে। ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই যশ, অর্থ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি পেয়ে যাচ্ছে। জীবন বদলে যাচ্ছে রাতারাতি। কিন্তু তাদের মধ্যে সংযম নেই। এরপর সেই বিলাসী জীবন ধরে রাখতে গিয়ে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। সহজে যা পাওয়া যায়, সহজেই আবার তা হারিয়েও যায়, এটা বোঝে না তারা। ফলে, হতাশা জন্ম নিচ্ছে। লড়াই করতেই শিখছে না কেউ। আগেভাগেই হার মানছে।’

শ্রীলেখা স্পষ্টভাবে জানান, এই সময়ে শিল্পীদের শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মানসিক সুস্থতার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তার পরামর্শ, সব বয়সী শিল্পীদের ক্ষেত্রেই মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করা উচিৎ।

কেআই/আরআইজে