ভাষা আন্দোলন নিয়ে কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক, গীতিকার, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ৭টায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।

তার মৃত্যুতে দেশীয় শোবিজ অঙ্গনেও শোকে ছায়া নেমে এসেছে। শোবিজের অনেকেই এই গুণীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন দেশের নন্দিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও। 

কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে বর্তমানে ফ্রান্সে রয়েছেন এই নির্মাতা। সেখান থেকেই নিজের ফেসবুক পাতায় আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শোক জানান এই তিনি।

ফারুকী লেখেন, ‘গাফফার ভাইয়ের অনেক মত বা কথার সাথে আমার দ্বিমত ছিল, অনেক কথার সাথে একমত ছিল। আমার কাজ খুঁজে বের করে দেখে আমাকে ফোন দিয়ে উনি উৎসাহ দিতেন। আমার কাজ সরকারি সেন্সর কলে আটকা পড়লে তিনি এর প্রতিবাদ করতেন। তিশার অভিনয়ের দারুণ ভক্ত ছিলেন উনি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যতটুকু বুঝেছি সিনেমার ব্যাপারে উনার আগ্রহ ছিল প্রবল। এবং উনার সিনেমারুচি উনার সময়ের তুলনায় অগ্রসর।’

আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে পুরনো স্মৃতিও তুলে ধরেন তিনি, ‘উনাকে আমি অনেকবার একটা কথা বলেছি, “গাফফার ভাই, আপনি যদি আর কিছু নাও লিখতেন, কেবল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র জন্যই আপনার স্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে পাকা থাকতো। আপনাকে ভালোবাসুক মন্দবাসুক, প্রতি বছর একবার করে বাংলাভাষী মানুষেরা প্রাণ খুলে গাইবে আপনার লেখা গান। কোনো এক একলা ছাদের নীচে বসে লিখা আপনার শব্দগুলা ডানা মেলবে ওদের কণ্ঠের আবেগে। ভাবা যায় কী এক বিস্ময়কর ঘটনা এই গান? বিদায় আবদুল গাফফার চৌধুরী!”

উল্লেখ্য, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মিডলসেক্সে এজোয়ার এলাবার মেথুইন রোডের ৫৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন।

ছাত্রজীবনে লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়েছিল তার। ১৯৪৯ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত মাসিক সওগাত পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’।

গাফ্ফার চৌধুরী ইউনেস্কো পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।

আরআইজে