দেশের অভিনয় জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম হুমায়ুন ফরীদি। অভিনয়ের প্রায় সব গলিতে তার বিচরণ ছিল। মঞ্চ থেকে শুরু করে টিভি নাটক কিংবা সিনেমা; সবখানেই ছড়িয়েছেন অবিস্মরণীয় দ্যুতি। তাইতো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও সবার মনে এখনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছেন তিনি।

আজ ২৯ মে হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। ভাষা আন্দোলনের বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৭০-এ পা দিতেন নন্দিত এই তারকা।

হুমায়ুন ফরীদি বেঁচে নেই ১০ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু তার অভিনীত নাটক-সিনেমা এখনো দর্শককে মুগ্ধ করে। তার চিন্তা-ভাবনা-দর্শন একাধিক প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রেরণা দেয়। শুধু তাই নয়, আধুনিক এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘুরে বেড়ায় হুমায়ুন ফরীদির অনেক কথা। তেমন কয়েকটি কথায় চোখ বুলানো যাক…

মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরীদি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর মতো এতো স্নিগ্ধ, এতো গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ মৃত্যু অনীবার্য, তুমি যখন জন্মেছো তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনীবার্য তাকে ভালোবাসাটা শ্রেয়।’

হুমায়ুন ফরীদি

প্রেম নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির সীমাহীন মুগ্ধতা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রেমে পড়ার মতো এত আনন্দনায়ক কিছু কি আছে পৃথিবীতে? আমি এখনো একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি। নাম বলা ঠিক হবে না, ওর ক্ষতি হবে।’

হুমায়ুন ফরীদির কাছে প্রেমের সংজ্ঞাও ছিল চমৎকার। তার ভাষ্য ছিল, ‘প্রেম হচ্ছে স্বর্গীয়। প্রেমের যে অনুভূতি, এটা পবিত্র এবং স্বর্গীয়। প্রেমের চেয়ে ভালো বিষয় মানব ইতিহাসে নেই। আমি শুধু মানুষে মানুষে প্রেমের কথা বলছি না। একটা মানুষ বৃক্ষের সঙ্গে প্রেম করতে পারে, একটা মানুষ তার বাসার জানালার পাশে যে গাছটি আছে, সে গাছে যে দোয়েল পাখিটি বসে, ওই পাখির প্রেমেও পড়তে পারে। সাধারণত আমরা প্রেম বলতে বুঝি, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এরকম না। যেমন আমাদের নবীর সঙ্গে আল্লাহ্‌র প্রেম, এটাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবে? এটাকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব না। এটাকে শুধু হৃদয় থেকে অনুভব করতে হবে। প্রেম হচ্ছে এরকম।’

প্রেম বলতে সাধারণ ভাষায় যেটা বোঝানো হয়, সেই প্রেম হুমায়ুন ফরীদির জীবনে প্রথম এসেছিল কৈশোরে। এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘তখন আমার বয়স ১৪-১৫ বছর। প্রেমে পড়লাম এক গার্লস স্কুলের ম্যাডামের। যার বয়স আমার চেয়ে ২০ বছর বেশি। ওটা আমার প্রথম পড়া। এরপর বহুবার প্রেমে পড়েছি। প্রেমে পড়ার মতো আনন্দ বোধহয় আর কিছুতে নেই। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, কাউকে আঘাত দিয়ে প্রেমে পড়ার মতো গর্হিত কাজ পৃথিবীতে নেই।’

হুমায়ুন ফরীদি

ভালোবাসা নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির আরেকটি কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায়। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যখন কাউকে ভালোবাসবে, এক বুক সমুদ্র নিয়ে ভালোবাসতে হবে। তা নাহলে সে প্রেমের কোনো অর্থ নেই।’

পৃথিবীর চিরায়ত নিয়মের অংশ হয়ে হুমায়ুন ফরীদি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু কর্মময় জীবনে তিনি যে অনিন্দ্য সব কাজ উপহার দিয়ে গেছেন, সেটা থেকে যাবে অনন্তকাল। আর যে কথাগুলো বলে গেছেন, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে বিশুদ্ধ বাতাসের মতো।

কেআই/আরআইজে