সামাজিক মাধ্যমে এই মুহূর্তে আলোচিত নাম তাশরীফ খান। বন্যাদুর্গত সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষদের সাহায্য করতে দুটি ফেসবুক লাইভে আহ্বান জানিয়ে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তুলেছেন তিনি। গত ১৩ জুন থেকে সিলেটে থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছেন ‘কুড়েঘর’ ব্যান্ডের এই গায়ক। তার এই উদ্যোগ দেশব্যাপী কুড়িয়েছে প্রশংসা। সিলেটে বসেই ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক ওমর ফারুক নাঈমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

সিলেটের অনেক দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। কোনো সমস্যায় পড়েছেন?

আসলে অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছানোর দিকে আমরা এতটাই মনযোগী ছিলাম নিজেদের কথা মাথায় আসেনি। যদি প্রত্যন্ত এলাকায় ঢুকতে না পারি, তাহলে দেশের অনেক মানুষ বন্যার প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে না। ঝুঁকি নিয়ে এমন সব এলাকায় গিয়েছি, যেখানে টিনের চালে চালে মানুষ। চোখের সামনে দেখছি মানুষ, পশু, ঘরবাড়ি স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এমনও হয়েছে, নৌকার অভাবে ত্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী আমাদের অনেক সহায়তা করেছে।

মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শুরুটা কবে থেকে?

ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সামর্থ্য হলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ইচ্ছা পূরণ করব। পরে যখন গান শুরু করি, তখন কিছুটা অর্থ হাতে আসতে থাকে। মানুষের ইচ্ছা পূরণ করতে করতেই করোনা দেখা দেয়, তখন একটু বড় পরিসরে মানুষের পাশে দাঁড়াই। বন্ধু ও পরিচিতজনের চোখের অপারেশন, কারও মায়ের অসুস্থ হলে পাশে দাঁড়াই। একসময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমার নেশা হয়ে যায়।

সংগীতে আপনার যাত্রা শুরু কীভাবে?

‌২০১৬ সালে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমাদের শুরু। আমি একা একা গান করতাম। আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল ছিল। ভার্সিটি লাইফে সেখান থেকে আমার ছোট ভাইরা চেয়েছিল একসাথে কিছু একটা করার। সেখান থেকেই খেলার ছলে আমাদের যাত্রা শুরু। আমি নিজে গান লিখতাম, আমার বন্ধু আজিজুল সেও লিখত। আমরা নিজেরা বসে বসে গান লিখতাম, সুর করতাম। আমার ইউটিউব চ্যানেলে গানগুলো আপলোড করতাম।

ত্রাণ নিয়ে সেবাবাহিনীর সঙ্গে দুর্গম এলাকায় যাচ্ছেন তাশরীফ

মানুষের সাড়া পাচ্ছিলেন কেমন?

‌আস্তে আস্তে দেখলাম গানগুলো মানুষ পছন্দ করছে। শেয়ার করছে। খুব রাতারাতি গানগুলো মানুষের পছন্দ হয়। আমরা যে খুব পরিকল্পনা করে কোন কিছু করেছি যে এমন না। আমরা চেয়েছি একটা একটা করে মৌলিক গান করব। সেটা আমরা করেছি। ইউটিউবে আপলোড করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটার পর একটা গান করেই যাব। যা হবার হবে।

আপনার স্বপ্ন কী ছিল?

‌আমি ছোটবেলা থেকে ব্যান্ডের গানের খুব ভক্ত। নগরবাউল, এলআরবি, মাইলস তাহসান কিংবা মমতাজ। আমি আসলে সবার গান‌ই পছন্দ করতাম। সবাই আমার আইডল। স্বপ্ন দেখতাম আমিও হয়তো কোন একদিন স্টেজে পারফরম্যান্স করতে পারব। নগর বাউলের মতো গান গাইব। বলাটা হয়তো ভুল হচ্ছে, কিন্তু স্বপ্নটা আসলে বড় থাকতে হবে। এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। আমরা স্টেজে গান গাইব, মানুষ আমাদের লেখা আমাদের সুর করা গানগুলো গাইবে।

কার অনুপ্রেরণায় এতদূর আসতে পেরেছেন?

‌একেবারে শুরু থেকেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার বড় ভাই টিএম তানভীর সিদ্দিকী। যাকে আমি দাদামনি বলি। তিনি শুরু থেকেই লেগে ছিলেন। আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন। বলতেন কে কি করেছে সেটা না ভেবে তোমরা কি করবা সেটা নির্ধারণ করো।

আপনাদের কোন গানটি মানুষ বেশি গ্রহণ করেছেন এবং নিজে তৃপ্ত হয়েছেন?

‌আমরা যখন ‘ব্যাচেলর’ গানটা করলাম তখন আমার ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার দুই-আড়াইশো। তখন এটাই আমার কাছে অনেক ছিল। তখন আমি গানটির বর্ণনায় লিখেছিলাম-ব্যাচেলর গানটা আমি দুই বাংলার সকল ব্যাচেলরকে উৎসর্গ করলাম। ২০১৬ সালের সেই গান নিয়ে এখনো গর্ববোধ করি। ২০২২ এসে বলতে পারি গানটি আসলেই দুই বাংলার ব্যাচেলররা শুনেছেন। এভাবেই আসলে স্বপ্নটা সত্যি হয়।

আরআইজে